সরকারী চাকুরীতে তথাকথিত মেধাবীদের দৌরাত্ম

এ মেধা জাতীর কী দরকার আছে?
এ মেধা জাতীর কী দরকার আছে?
রাজধানীর অভিজাত এলাকার প্রায় ৭০-৮০% অট্টালিকাসম বাড়িগুলোর মালিক সরকারী আমলারা। একজন আমলা চাকুরীর প্রথম দিন হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কত টাকা বৈধভাবে আয় করে তার একটা হিসাব বা খতিয়ান রয়েছে। সে হিসাবের সাথে মিলিয়ে দেখুন এ সব বাড়ি কোত্থেকে আসল? একটাই উত্তর, মেধা থেকে। নিসন্দেহে বলা যায় তাঁদের মেধার বিকাশের মাধ্যমে। এ মেধা জাতীর কী দরকার আছে?

বিচারপতি শাহাবুদ্দিন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন। সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। সর্বপরি দু-দুবার বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হলো, তিনি আইন পড়েননি, আইনের ছাত্র ছিলেন না। দুনিয়ার কোন দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রী হতে ডাক্তার লাগে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হতে সেনা, আধাসেনা, পুলিশ বা আনছারও লাগে না। পুর্ত মন্ত্রী হতে ইঞ্জিনিয়ার লাগে না। এমনকি সেনিটেশন মন্ত্রী হতে মেথরও লাগে না। কিন্তু, আমাদের দেশে সামরিক জান্তারা ক্ষমতা দখল করে একটা প্রাথা প্রবর্তন করেছে, মন্ত্রী হতে হলে সংশ্লিষ্ট পেশাধারী হতে হবে।

মন্ত্রীর কাজ এস্কিকিউশন নহে। মন্ত্রীর কাজ পলিসি, নীতি, পরিকল্পনা প্রণয়ন, অনুমোদন করা। বাস্তবায়ন করবে আমলা পর্যায় থেকে। আমলারা অনুমোদিত পরিকল্পনা প্রচলিত আইন, বিধি বিধান মত তা বাস্তবায়ন করবে। এখানে আমলাদের মেধা খাটানোর সুযোগ কোথায় ? তবে হ্যাঁ, প্রচলিত আইন, বিধি-বিধানের এড়িয়ে, ফাঁক ফোঁকর খুঁজে বের করে কী ভাবে অর্থ সম্পদ হাসিল করা যায় তা বেড় করতে মেধার দরকার হতে পারে।

একটি উদাহরন দিতে চাই পাকিস্তান আমলের বিখ্যাত সিএসপি আমলা জনাব এম. কেরামত আলী, একাত্তরে পাকিস্থানের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান ও ভূমিকা রাখা সত্যেও পাকিস্তানের চাকুরীর জেষ্ঠতামূলে বাংলাদেশে একজন আমলা শীরমনি বনে গিয়ে বাংলাদেশের কেবিনেট সচিব হয়েছিলেন। ঐ সময় সরকারী বিধান ছিল, কোন আমলা যে শহরে পদায়িত হবেন বা চাকুরী করবেন, ঐ শহরে তাঁর নিজস্ব বাড়ি থাকলে তিনি সরকারী আবাসন পাবেন না। সচিবরা সাধারনত ফ্রি ফার্নিশ বাড়ি পেয়ে থাকেন। কেরামত সাহেব সর্বোচ্চ সচিব হয়েও ঢাকায় নিজস্ব দুটি বাড়ির মালিক হওয়ায় আইনত সরকারী ফ্রি ফার্নিশ বাড়ি বরাদ্দ পাচ্ছেন না। এবার তিনি তাঁর কুট বুদ্ধি-মেধা খাটিয়ে একটা পলিসি আবিস্কার করলেন এবং সামরিক সরকারকে মেধা দিয়ে কনভিন্স করতে সক্ষম হলেন যে, সচিবরা দেশের-রাষ্ট্রের মূখ্য দায়িত্ব পালন করেন, তাই তাদের মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য বাইরের চিন্তা-ভাবনা থেকে দূড়ে রাখা অতি আবশ্যক বিধায়, কেবলমাত্র সচিবদের ক্ষেত্রে একই শহরে বাড়ি থাকলে সরকারী বাড়ি পাবেন না এ বিধানটি শিথিল করা আবশ্যক। যথা চিন্তা তথা কর্ম। সরকারী পরিপত্র জারি হল, “সরকারী প্রচলিত বিধান মতে একই শহরে নিজস্ব বাড়ি থাকলে কোন সরকারী কর্মকর্তা সরকারী আবাসন প্রাপ্য হবেন না। কিন্ত্র কেবলমাত্র সচিব পদে কর্মরত কর্মকর্তাগণ একই শহরে দুটি বাড়ি থাকলেও তিনি সরকারী বাড়ি বা ফ্রি ফার্নিশ কোয়াটার পাবেন। তবে কোন অবস্থাতেই দু’টির বেশী বাড়ি থাকলে সরকারী বাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য হবেন না”। বা কী চমৎকার মেধা ! যেহেতু ওনার দুটি বাড়ি ছিল তাই মেধা খাটিয়ে বিকল্প প্রাপ্যতার পথ সৃষ্টি করে নিয়েছিলেন। এবার বুঝলেন মেধা কাকে বলে, কত প্রকার, কী কী?

কাজেই প্রশাসনে অতি উচ্চ মেধার কোন প্রয়োজন নেই। তাঁরা কেবল আইন ও বিধি মোতাবেক সরকারী দায়িত্ব পালন করবেন কোন অসুবিধার সম্মুক্ষিণ হলে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে দায়িত্ব নিষ্পন্ন করবেন। বেশী মেধাবীদের শিক্ষকতা, গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিয়োগ করা প্রয়োজন। সরকারী চাকুরী বা প্রশাসনে মধ্যম মেধাবী হলেই ভাল চলবে। বেশী মেধাবী হলে তাঁরা যে জাতীকে কোন লাইনে উদ্ধার করে তা স্বাধীনতার ৪৬ বছরে জাতী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

আরও একটা দিকে আলোকপাত করতে চাচ্ছি, দেশের রাজধানী ঢাকা’র অভিজাত এলাকা, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা ইত্যাদি আবাসিক এলাকার অট্টালিকাসম বাড়িগুলোর মালিক কারা? প্রায় ৭০-৮০% বাড়ির মালিক সরকারী আমলারা। একজন আমলা চাকুরীর প্রথম দিন হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কত টাকা বৈধভাবে আয় করে তার একটা হিসাব বা খতিয়ান রয়েছে। সে হিসাবের সাথে মিলিয়ে দেখুন এ সব বাড়ি কোত্থেকে আসল? একটাই উত্তর, মেধা থেকে। নিসন্দেহে বলা যায় তাঁদের মেধার বিকাশের মাধ্যমে। এ মেধা জাতীর কী দরকার আছে?

আরও একটা কথা না বললেই নয়, ৭৩ ব্যাচের মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাগণ যখন উপ-সচিব ও তদোচ্চ পদে পদোন্নতির দ্বার প্রান্তে উপনিত হলেন, তখন পাকিস্তান ফেরৎ তথাকথিত মেধাবী আমলারা বলা শুরু করলেন, ওঁরা লেখাপড়া জানে না, ওঁদের পদোন্নতি না দিয়ে ৭৭ ব্যচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে হবে। এভাবে ৭৩ ব্যচের কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে। অবশ্য তাঁরা আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে ন্যয় বিচার পেলেও ততদিনে চাকুরীর বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় শুধু আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন। যাদের মধ্যে, বর্তমান সিইাসি, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রমুখ।

পরিশেষে বলতে চাই, অতি মেধাবীদের শিক্ষকতা ও গবেষণায় নিয়োজিত করা হোক, মধ্যমানের মেধাবীদেরকে সরকারী চাকুরীতে শতভাগ নিয়োগ করা হোক। সে ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রশাসনকে দেশপ্রেমিক, সৎ ও পরীক্ষিত বিশ্বসযোগ্য করে গড়ে তোলা হোক।

সর্বশেষ আপডেট: ২ মার্চ ২০১৮, ১৭:০০
ইকবাল হোসেন ফোরকান
রাষ্ট্রীয় সম্মনীভাতা প্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন