মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে কোটা প্রবর্তন হয়েছে দয়ায় নয় জাতীয় স্বার্থে

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে কোটা প্রবর্তন হয়েছে দয়ায় নয় জাতীয় স্বার্থে।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে কোটা প্রবর্তন হয়েছে দয়ায় নয় জাতীয় স্বার্থে।
জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে প্রশাসনে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক, সৎ, নিবেদিত ও নিষ্ঠাবানদের নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্যই মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করা হয়েছিল।

মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা কখনোই খারাপ ছিল না এবং কারো দয়ায় কোটা প্রবর্তন করা হয়নি, বরং মুক্তিযোদ্ধারা সৎ, মেধাবী, সাহসী, দেশপ্রেমিক ও রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত বিধায় জাতীয় স্বার্থে ৭১ এ জীবনের ঝুকি নিয়ে মারাত্মক অসম যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে জাতিকে একটা ভূখন্ড, একটা মানচিত্র, একটা পতাকা, একটা দেশ উপহার দিয়েছে। তবে হ্যাঁ, আর্থিকভাবে মুক্তিযোদ্ধারা নিজ স্বার্থ হাসিলে পারঙ্গম এবং নিজ সচ্ছলতা অর্জনে পটু ছিলেন না।

কেবল আর্থিক সহায়তার জন্য চাকুরীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়নি। বরং জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে প্রশাসনে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক, সৎ, নিবেদিত ও নিষ্ঠাবানদের নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্যই মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করা হয়েছিল। এছাড়াও কোটার কথা পরিত্র সংবিধানে বণিৃত আছে, তাই কোটা বাতিল করা হলে তা সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারার বরখেলাপ হবে। কাজেই, দেশপ্রেমিক, সৎ, দেশ-জাতি তথা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত্বের প্রতি অবিচলআস্তা-বিশ্বস ও আপোষহীনভাবে নিবেদিত প্রশাসন গড়ার লক্ষে প্রশাসনে অধিক হারে মুক্তিযোদ্ধা পোষ্যদের নিয়োগ প্রদান করে প্রশাসন যন্ত্রকে আরও দেশপ্রেমিক, সৎ ও জবাবদিহিমূলক, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা আজ সময়ের দাবী। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পোষ্যদের শরীরে প্রবাহিত পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক রক্ত জাতীর জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদনকারীগণ সম্মিলিতভাবে লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হলেই তাদেরকে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে ভুলে গেলে চলবে না যে, অভিজ্ঞতা কাজ করতে করতে এমনিতেই হয়ে যায়, কেননা তথাকথিত মেধাবিদেরও কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকেনা। অপরদিকে অপরীক্ষিত ও ভিতু, আপেরষকামী রক্তের ধারা বহনকারী তথাকথিত অতি মেধাবীদের প্রশাসনে নিয়োগ না দিয়ে শুধুমাত্র শিক্ষকতা ও গবেষণামূলক কাজে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। জাতি দেখুক কথিত মেধাবীরা সেখানে কী কী ভাবে জাতিকে ‘উদ্ধার’ করতে সক্ষম হয়।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে, মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে স্বাধীন দেশের প্রশাসন গঠনের ভার তৎকালীন পাকিস্তান প্রশাসন থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কথিত মেধাবী সাবেক সিএসপি ও পকিস্তান আমলে তথাকথিত মেধার ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত অন্যান্য আমলাদের উপর বর্তিয়ে ছিল। স্বাধীনতার ৪৬/৪৭ বছর পর আজ দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নৈতিক অবস্থা দেখে তাদের মেধার প্রশংসা করার কোন অবকাশ নেই। বলা বাহুল্য, ঐ সকল মেধাবীদের অধিকাংশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের পক্ষে জীবনপাত করেছিলেন। যদিও তারা তাদের কথিত মেধা বিনিয়োগ করে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে সক্ষম হন’নি বরং শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ-পরাজিত হয়েছেন। এ থেকেই তো তাদের কথিত মেধার তীক্ষ্ণতার প্রমান পাওয়া গিয়েছিল। তথাপি অবোধগম্য কারণে স্বাধীনতার পর ঐ সকল ব্যর্থ তথা পরাজিত মহিরুহু প্রশাসকদের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনে বসানো হয়েছিল। তাঁরা দেশ-জাতির কতটুকু উদ্ধার করতে পেরেছেন, তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে তারা তাদের সেই কথিত মেধা, কৌশল ও অভিজ্ঞতা খাটিয়ে ঘুষ-দূর্নীতি আজ সর্বক্ষেত্রে প্রসারিত করতে সফল হয়েছেন। জাতির নৈতিক চরিত্র আজ ধ্বংশের শেষ প্রান্তে উপনীত করতে তাদের মেধার পরিপূর্ণ পারঙ্গমতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন বৈকি। এত কিছুর পরও আমাদের দেশের এক শ্রেণীর কথিত মেধাবীরাই (১) আজ স্বাধীনতা বিরোধীদের মনি-কাঞ্চন র্নিভর ফরমাইশে অতি সুক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে প্রশাসন থেকে সরানোর জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে কোটা বাতিলের পক্ষে ক্রমান্বয়ে জনমত সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরীর ঠিকাদারী নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

সর্বশেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:০৩
ইকবাল হোসেন ফোরকান
রাষ্ট্রীয় সম্মনীভাতা প্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন