সরকারী চাকুরীতে মেধাবীদের কীর্তি

তথাকথিত অতি মেধাবীদের প্রশাসনে নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষকতা ও গবেষনাণামূলক কাজে নিয়োগ করা যেতে পারে।
তথাকথিত অতি মেধাবীদের প্রশাসনে নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষকতা ও গবেষনাণামূলক কাজে নিয়োগ করা যেতে পারে।
ড. আকবর আলীদের জানা উচিৎ যে, মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা কখনোই খারাপ ছিল না, তাঁরা জাতীকে একটা দেশ উপহার দিয়েছিল। তবে হ্যাঁ, আর্থিকভাবে মুক্তিযোদ্ধারা ড. আকবর আলেী খানদের মত তথাকথিত মেধাবী, নিজ স্বার্থ হাসিলে পারঙ্গম, সচ্ছলতা অর্জনে পটু ছিলেন না। কেবল আর্থিক সহায়তার জন্য চাকুরীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়েছিল না। প্রশাসনে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক, সৎ, নিবেদিত ও নিষ্ঠাবানদের নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্যই মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করা হয়েছিল।

স্বাধীনতার পর দেশের প্রশাসন পাকিস্তানের প্রশাসন থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কথিত মেধাবী (!) সাবেক সিএসপি ও অন্যান্য পকিস্তান আমলে মেধার (!) ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত আমলাদের উপর বর্তিয়ে ছিল। স্বাধীনতার ৪৬/৪৭ বছর পর দেশের অবস্থা দেখে তাদের মেধার তারিফ করার কোন পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য ঐ সকল মেধাবীরা ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের পক্ষে জীবনপাত করে, মেধা বিনিয়োগ করে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়নি, ব্যর্থ হয়েছে বা পারঙ্গমতা প্রমান করতে পারেনি। এতেই তাদের মেধার তিক্ষ্নতার প্রমান পাওয়া গেছে। তাঁর পরও অবোধগম্য?) কারণে স্বাধীনতার পর ঐ সকল ব্যর্থ/পরাজিত বিশাল বিশাল মহিরুহু আকৃতির প্রশাসকদের স্বাধীন দেশের প্রশাসনে বসানোর পর তাঁরা দেশ-জাতিকে কতটুকু উদ্ধার করতে পেরেছে, তা তো দেখাই যাচ্ছে।

তবে তাদের মেধা, কৌশল ও অভিজ্ঞতা দিয়ে/খাটিয়ে ঘুষ-দূর্নীতি আজ সর্বক্ষেত্রে প্রসারিত করে জাতীকে ধ্বংশের প্রান্তে আনতে পরিপূর্ণ মেধার বিকাশ তথা সক্ষমতা দেখাতে পেরেছে। এর পরও আমাদের দেশের নব্য শিক্ষিত তথাকথিত সুশিলরা ইনিয়ে বিনিয়ে বস্তাপচা মেধার ধূয়া তুলে পিরীক্ষিত দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান/পোষ্যদের প্রশাসন তথা রাষ্ট্রের প্রশাসন থেকে দূরে রাখার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বিভিন্ন কৌশলে-নীরবে সন্তর্পনে অব্যহত রেখে চলেছে। ৭১ সালেও কথিত মেধাবীরা (!) জীবনের ঝুকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। তাঁরা শহরে থেকেছে, সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, সরকারী চাকুরী করে বেতন-ভাতা আহরণ করেছে, লেখাপড়া চালিয়েছে, এমনকি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। কেউ কেউ অবশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করারও চেষ্টা করেছে, বিশেষ করে যুদ্ধের শেষের দিকে। অন্যদিকে জীবনের ঝুকী নিয়ে দেশপ্রেমিক যুব সমাজ অসম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে শত্রু মুক্ত করে জাতীকে একটা দেশ, একটা পতাকা, একটা মানচিত্র উপহার দিয়েছে। তখন থেকেই পরাজিত শক্তি ছলে, বলে, কলে কৌশলে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নৈতিকতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। কখনো ধর্মের নামে, কখনো সাম্প্রদায়িকতার নামে কখনো বা বিভিন্ন ওজুহাত সৃষ্টি করে।

বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে বা মনি-কাঞ্চনের লোভে বা অন্য কোন হীন উদ্দেশ্যে বা সরকার কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের দেয় কিছু সুযোগ-সুবিধার লোভে, সর্বপরি বিচার হীনতা তথা আইনের প্রয়োগের অভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মেধাবীদের সৃষ্ট কৌশল অবলম্বন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ভূয়াদের অন্তর্ভূক্ত করিয়ে আজ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই প্রশ্নের সম্মুখিন করে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে সে ভূয়ার কারণ দেখিয়েই আবার মুক্তিযোদ্ধা পোষ্যদের চাকুরীর কোটা বাতিল বা সংকুচিত করার জিকির তুলেছে।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ভারতের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে থেকে মুজিব নগর সরকারে যোগ দেয়ার সুবাদে ঝুকিপূর্ণ রনাঙ্গণে না এসে নিরাপদে থাকা কৌশলগত মুক্তিযোদ্ধা ড. সা’দত পি এস সি’র চেয়াম্যান থাকা কালে বাইজ্যিক ভাবে ৩০% কোটা না কমিয়ে কোটার মধ্যে কোটা ঢুকিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকির মত কোটা প্রবর্তন করায় প্রকৃত পক্ষে মোট শূণ্য পদের মাত্র ১০% এর ও কম মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য সন্তান/নাতীদের নিয়োগের কৌশল চালু করা হয়েছে। সম্মিলিত উন্মুক্ত মেধা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যরা কোটার সুযোগ পাবেন। তাও পিএসসি’র দৃষ্টিতে উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাপ্রার্থী না পাওয়া গেলে সে সকল পদও তথাকথিত মেধা তালিকা থেকে পূরণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঐ সকল জ্ঞান পাপিরাই যুদ্ধ পরবর্তী প্রশাসনে বঙ্গবন্ধুর উদারতার সুযোগে অনুপ্রবেশ করে দেশকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তামাম দুনিয়ায়, মেধাবিরা যায় শিক্ষকতা পেশায়। প্রশাসনিক কার্যে অতি মেধা’র দরকার হয়না। এখানে মূখ্য যোগ্যতা প্রয়োজন সততা, দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি সর্বোচ্চ আনুগাত্যতা। যা, আমাদের দেশের প্রশাসনে নিয়োজিতদের, অনুপ্রবেশকারী তথাকথিত মেধাবীদের আদৌ আছে কী না সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

যেমন সম্প্রতি, শিক্ষা সচিব আহাম্মকের মত নিঃসঙ্কোচে বলেছে,“প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক”। নিশ্চই এ আহাম্মক মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পায়নি, পেয়েছে মেধা কোটায় ! এখন বুঝলেন এদেশের মেধার দৌড় কতখানি।

যিনি শ্রমের বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি শ্রম জীবী। আমাদের দেশে কিছু “ওদল কুককুত” ব্যক্তি আছে যারা ফরমাইশী জ্ঞান-বুদ্ধি বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করে, তাই তাঁরা আজ বুদ্ধিজীবী। বিশেষ করে চাকুরী জীবনে কোন দিন জনগণের পক্ষে একটা কথা বলা তো দূড়ে থাক নীজ স্বার্থ ব্যতীত জনস্বার্থে একটা হাঁচিও দেয়নি। চাকুরীর বল্গাহীন ক্ষমতা অপব্যবহার করে ইতিহাসে অনার্স-মাস্টর্স করার পর ক্ষমতার প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে অর্থনীতিতে পিএইচডি তগমা হাসিল করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্ব্বোচ্চ, সচিব পদে শোভা বর্ধন করে বিদেশেও মেধা খয়রাত দিতে দিতে বিশ্বকে উদ্ধার করে পুনরায় দেশের অর্থনীতির পশ্চাৎদেশে বাঁশ প্রয়োগ করে তুঙ্গে তুলে দিয়েছে। আজ তাঁরা জাতীর বিবেক সেজেছে। চাকুরী জীবনে প্রাপ্যতা নির্বিশেষে সর্ব্বোচ্চ সকল বেনিফিট হাসিল করে, অবসরের পর বিভিন্ন কায়দায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও সেনা ছত্রছায়ায় ত্বত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পদ অলঙ্কিত করে যারপরনাই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পর আমরন ফরমাইশী জ্ঞান ও বুদ্ধি বিক্রীর মাধ্যমে অবলিলায় জাতীকে নছিযত বিতরণ করে যাচ্ছে। চাকুরী জীবনে ঐ সকল দেউলিয়া বুদ্ধিমান জ্ঞাণী (!) মেধাবী প্রাণীরা জাতীকে কী কী ভাবে উদ্ধার করেছেন জাতীর সামনে তার কোন খতিয়ান নেই।

নিজের জীবনকে নিরাপদ রাখতে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁদের কেউ কেউ দেশত্যাগ করেছিলে। সেখানেও সোনার চামুচ তাদের মুখেই ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে ভারতের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে থেকে মুজিব নগর সরকারে যোগ দেয়ার সুবাদে ঝুকিপূর্ণ রনাঙ্গণে না এসে নিরাপদে থাকা কৌশলগত মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সর্বাগ্রে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সকল সুযোগ-সুবিধা, তথা- ২ বছরের ভূতাপেক্ষা জেষ্ঠতা, যদিচ্ছা পদোন্নতি নেয়ার নব নব কৌশল আবিস্কার করে দ্রুততম পদোন্নতি হাসিল, অগ্রীম ইক্রিমেন্ট থেকে শুরু করে হেন সুযোগ-সুবিধা নেই যা তাঁরা গ্রহণ, আহরণ-ভোগ করেনি। তাদেরই এক জন ড. আকবর আলী খান সিএসপি বাংলাদেশ থেকে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁরা আজ স্বাধীনতা বিরোধীদের ফরমাইশে অতি সুক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে প্রশাসন থেকে সরানোর জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে, আস্তে আস্তে, ধীরে ধীরে শ্লোপয়জনিং এর মত সহনীয় পর্য়ায়ে কোটা বাতিলের পক্ষে ক্রমান্বয়ে জনমত সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরীর ঠিকাদারী নিয়ে মাঠে নেমেছে। সাবধান! ঘুমন্ত সিংহদের লেজ দিয়ে কান চুলকানো চেষ্টা থেকে বিরত থাকলেই ভাল। নইলে সিংহের ঘুম ভেঙ্গে গেলে খবর আছে না, খবর সৃষ্টি হয়ে যাবে। তাই আবারও বলি সাবধান, সময় থাকতে সংজত হও।

গত ২০ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দ্য প্রেজেন্ট সিভিল সার্ভিস সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে ড. আকবর আলী খান বলেছে, “বাংলাদেশ থেকে এ মুহূর্তে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া উচিত। কোটার কারণে দেশের মেধাবীরা আজ বিপন্ন। বাংলাদেশের ক্যাডার নিয়োগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোটা সিস্টেম, ফলে অনেক মেধাবীরা চাকরি পাচ্ছে না। কোটা বন্ধ হলে অনেক মেধাবীরাই চাকরি পাবে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পদ্ধতিতে অসঙ্গতি রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা সিস্টেম চালু হয়েছিল, কারণ তাদের অবস্থা তখন খারাপ ছিল। এখন মুক্তিযোদ্ধার নামে যে কোটা দেওয়া হয় তা নিতান্তই অমূলক”।

ড. আকবর আলীদের জানা উচিৎ যে, মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা কখনোই খারাপ ছিল না, তাঁরা জাতীকে একটা দেশ উপহার দিয়েছিল। তবে হ্যাঁ, আর্থিকভাবে মুক্তিযোদ্ধারা ড. আকবর আলেী খানদের মত তথাকথিত মেধাবী, নিজ স্বার্থ হাসিলে পারঙ্গম, সচ্ছলতা অর্জনে পটু ছিলেন না। কেবল আর্থিক সহায়তার জন্য চাকুরীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়েছিল না। প্রশাসনে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক, সৎ, নিবেদিত ও নিষ্ঠাবানদের নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্যই মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করা হয়েছিল।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও আশানরূপ সৎ, দেশপ্রেমিক যোগ্য প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। কাজেই, দেশপ্রেমিক, সৎ, নিবেদিত প্রশাসন গড়ার লক্ষে প্রশাসনে অধিক হারে মুক্তিযোদ্ধা পোষ্যদের নিয়োগ দিয়ে প্রশাসন যন্ত্রকে দেশপ্রেমিক, সৎ ও জবাবদিহি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা আজ দেশ রক্ষার একমাত্র পথ। এক্ষেত্রে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার আবেদনকারীগণ লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হলেই তাদেরকে নিয়োগ দিতে হবে। অভিজ্ঞতা কাজ করতে করতে হয়ে যায়। এবং তথাকথিত অতি মেধাবীদের প্রশাসনে নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষকতা ও গবেষনাণামূলক কাজে নিয়োগ করা যেতে পারে। দেখেন, সেখানে তাঁরা কী উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

(আমরা তো আর ড. আকবর আলী খানদের মত মেধাবী নই, তাই বানান ভুল হতে পারে। নিজ গুনে ক্ষমা করে পাঠ করলে কৃতার্থ থাকব)।

সর্বশেষ আপডেট: ৩ মার্চ ২০১৮, ০৮:৫৭
ইকবাল হোসেন ফোরকান
রাষ্ট্রীয় সম্মনীভাতা প্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন