সবুজ সংকটে বিপন্ন লক্ষ্মীপুরের উপকূল

মেঘনার রাক্ষুসে ভাঙ্গন আর সচেতনতার অভাবে লক্ষ্মীপুরের উপকূলে ব্যাপক হারে ধ্বংস হচ্ছে সবুজ গাছপালা! কেউ দরিদ্রতার বেড়াজালে আটকা পড়ে, কেউ না শুনে না বুঝে সবুজ নিধনের উৎসবে মেতে উঠেছে! কখনও ঘূর্নিঝড়, কখনও ঝড়ো হাওয়ায়. কখনো রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক আন্দোলনে আবার কখনও-বা দূর্যোগের কবলে নিঃশেষ হচ্ছে এই প্রান্তিকের সবুজ। বিশেষ করে জেলা সদর, কমলনগর, রামগতির মেঘধাপাড়ে এই সংকট দিনদিন তীব্র থেকে তীব্রতর রুপ নিচ্ছে।

কেন নদীতীরে সবুজ লাগাতে হবে? কেন নদীতীরে এর ধ্বংস রোধ করতে হবে? কেনই-বা এর সুরক্ষায় সঠিক পরিচর্যা করতে হবে? মেঘনাপাড়ের মানুষ জানে না তা, মোটেও সচেতন নয় তারা। একটু আর্থিক সংকট দেখা দিলেই মানুষজন বৃক্ষ নিধনে উঠে পড়ে লেগে যায়। গাছগুলো বড় হতে না হতেই চলে এই নিধন অভিযান! অথচ, এই সবুজই দুর্যোগ থেকে প্রাণ রক্ষার অভিভাবক হিসেবে দাঁড়ায়। মানুষ বাঁচে, নিরাপদ রাখে ঘর- বাড়ি। উপকূলে এর প্রভাবে একদিকে যেমন জলবায়ুর পরিবর্তন আঘাত হানছে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম সবুজ মনষ্ক জীবন থেকে ছিটকে পড়ছে। ফলে উপকূলে বাড়ে বিপন্নতা, বিপদগামী হচ্ছে আমাদের আগামি প্রজন্ম! এদিকে, অনেক পড়ুয়া সবুজ সচেতনতায় অজ্ঞ থাকে। সবুজ সম্পর্কে দু-চারটি লাইন লিখতে অথবা বলতে বললে তারা যেন আকাশ থেকে পড়ে যায়! সবুজ সুরক্ষায় ওদের মাঝে মোটেও সচেতনতা নেই। পাঠ্যবইয়ে যতটুকু আছে, তা কেবল মাত্র পরীক্ষার খাতায় নাম্বার পাওয়ার জন্য! বাস্তব জীবনে এর কোন প্রতিফলন চোখে পড়ছেনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষরাতো এব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। অনেক কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এবিষয়ে জানতে আগ্রহী নয়, কি আর শিক্ষার্থীদের শিখাবে?

আজ ৫জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের উপকূলে পরিবেশ সচেতনতায় আজকের এই দিনে কি কোন সরকারি কার্যক্রম চোখে পড়ছে? নিশ্চয় না। এই বিশেষ দিনে কি কোন পরিবেশ সচেতনতা মূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া প্রয়োজন ছিলনা? নিশ্চয় দরকার। কিন্তু রাষ্ট্র আজ জলবায়ু পরিবর্তনে কোটি কোটি ডলার ব্যায় করছে। আমাদের কোটি কোটি ডলার খরচ করে চুক্তি করতে হবে না। জলবায়ু মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে সচেতনমূল কর্মসূচি হাতে নিলেই তো সমস্যার স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়। গোবর একটি উৎকৃষ্ট জৈব রাসায়নিক সার। যা কাঠের সঙ্গে রোদে গরম করে আগুনে জ্বালানো হয়, তখন কার্বন-মনো-অক্সাইড ও কার্বন-ড্রাই-অক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়। যা জলবায়ুর পরিবর্তনের মাধ্যমে উপকূলের সবুজ ধ্বংসে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

কমলনগর-রামগতিতে দীর্ঘ দিনের অনিয়ন্ত্রিত মেঘনার ভাঙ্গনও মানুষের কোটি কোটি টাকার সবুজ নদীর গভীর তলদেশে হারিয়ে যাচ্ছে। যে সবুজের
ফল বিক্রি করে মানুষ পুরো একটা পরিবারের খরচ চালাতে পারে আর সেই সবুজ সংকটও মানুষের ভাগ্যে মারাত্মক প্রভাব রাখছে। লক্ষ্মীপুরের উপকূলের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রামগতির কৃতি সন্তান ও লক্ষ্মীপুরের জনপ্রিয় হৃদয়ে রামগতি-কমলনগর ফেসবুকের এডমিন সাইফুল আলম মাসুম বলেন, “মেঘনার ভাঙ্গন ও সচেতনতার অভাবে জেলার প্রায় ৪০ভাগ গাছপালা হারিয়ে গেছে। এতে দুর্যোগ এলেই মানুষকে তাড়িয়ে ফেরে, আতংকে থাকতে হয় মানুষদের। এই অঞ্চলের সবুজ সুরক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মানুষদের সচেতন করা জরুরী।”
এমন প্রান্তিক উপকূলে কেমন সবুজ চাই? পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও জেলা জর্জ কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট হারুনুর রশীদ বেপারী মনে করেন, “তালগাছ, নারিকেল গাছ, খেঁজুরগাছের মতো সবুজ বৃক্ষা প্রান্তিকে বেশি বেশি করে লাগাতে হবে। এই ধরণের গাছপালা শক্তভাবে মাটিকে আঁকড়ে ধরে, ফলে ভাঙ্গে না। এতে করে সবুজের ছোঁয়ায় অনকটা নিরাপদে থাকা যায়। সবুজ নিয়ে তিনি আরও বলেন, “সড়কের পাশে ঐ সব গাছ লাগাতে
হবে, যে সব গাছের শেকড় সমানভাবে মাটির দিকে প্রবেশ করে। ফলে সড়কের কোন ফাটল ধরবে না এবং সড়ক নির্মাণের পর বহু দিন টিকবে।”
উপকূলের খবরের খোঁজে ছুটা চলা উপকূল সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু একুশশতকে বলেন, “উপকূলের পড়ুয়াদের মাঝে সবুজ সচেতনতা বাড়াতে পারলে তারাই উপকূলের সবুজ সুরক্ষায় এগিয়ে আসবে এবং তারাই পরিবার ও নিজ গ্রামের মানুষদের সবুজ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় উপকূলজুড়ে পড়ুয়াদের মাঝে ব্যাপক বিস্তৃতভাবে “সবুজ উপকূল” কর্মসূচির বাস্তবায়ন করে আসছি। যার ছোঁয়া আমরা লক্ষ্মীপুরের উপকূলে লাগাতে সক্ষম হয়েছি। আশারাখি এ অঞ্চলের পড়ুয়ারা “সবুজ উপকূল”
কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সবুজ সুরক্ষা করে একটি প্রাণহানিমুক্ত উপকূল উপহার দিতে এগিয়ে আসবে।”

সর্বশেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭, ০৯:০৭
জুনাইদ আল হাবিব
কমলনগর প্রতিনিধি

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন