বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড জিতলেন উপকূল বন্ধু সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু

উপকূলের খবর লিখে এবার তৃতীয়বারের মত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড জিতলেন উপকূল সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু। অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম-এ ‘সম্ভাবনার দুয়ারে উপকূল’ শিরোনামে দশ পর্ব ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য তিনি এবার এই অ্যাওয়ার্ড পেলেন।

রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হলে ‘ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ প্রদান করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ডিআরইউ এর সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন জুরি বোর্ড-এর সভাপতি শাহজাহান সরদার ও ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী।

এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৭জন সাংবাদিক ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ডিআরইউ গঠিত বিচারকমন্ডলীর মূল্যায়নে এ বছরের সেরা রিপোর্টারদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী। তাদেরকে ক্রেস্ট, চেক ও সনদপত্র দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, উপকূলের জেলেদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন লিখে ২০১৪ সালে এবং ২০১৫ সালে অরক্ষিত উপকূল বিষয়ে প্রতিবেদন লিখে এই অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন তিনি। এবার তৃতীয়বারের মত রিপোর্টারদের সম্মানজনক এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করেন রফিকুল।

রফিকুল ইসলাম মন্টু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল ঘুরে সরেজমিন প্রতিবেদন লিখছেন। তার প্রতিবেদনে উঠে আসছে টেকনাফ থেকে শুরু সুন্দরবনেএই দীর্ঘ উপকূলীয় তটরেখার বিভিন্ন বিষয়। উপকূলের অন্ধকার প্রকাশের আলোয় আনতে নিরন্তর চেষ্টা করছেন তিনি। তার প্রতিবেদনের বিষয় হিসাবে উঠে আসছে মানুষের জীবনযাত্রা, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, নারী-শিশু, এমনকি সরকারি বেসরকারি সেবা পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত।

উপকূল নিয়ে ভিন্নধারার রিপোর্টিং:
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপকূল নিয়ে নিবিড়ভাবে ব্যতিক্রম ধারার রিপোর্টিং শুরু করেন রফিকুল ইসলাম। সমুদ্র উপকূলবর্তী দুর্গম জনপদ ঘুরে রিপোর্টিংয়ের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের তথ্য নীতিনির্ধারক মহলে পৌঁছে দেওয়া।

অবহেলায় ডুবে থাকা পশ্চাদপদ উপকূলের চর, দ্বীপ, বিচ্ছিন্ন গ্রাম আর প্রত্যন্ত জনপদের সব খবর উঠে আসছে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। এরই মধ্যে উপকূলের রিপোর্টগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।

বিচ্ছিন্ন জনপদের সব তরতাজা খবর পাঠককে জানাতে রফিকুল ইসলাম অধিকাংশ সময়ই উপকূলীয় জনপদে অবস্থান করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য উপকূলের অধিকাংশ এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি।

এ ছাড়াও তিনি পূর্ব উপকূলের কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, পতেঙ্গা, সন্দ্বীপ, নোয়াখালীর হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, রায়পুর, চাঁদপুরের হাইমচর, মধ্য উপকূলের ভোলার মনপুরা, দৌলতখান, চরফ্যাশন, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া, কুয়াকাটা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, পশ্চিম উপকূলের বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষীরা জেলার তালা ও শ্যামনগর উপজেলার প্রান্তিক জনপদের সরেজমিন তথ্য তুলে এনে প্রকাশ করেছেন।

এ সময়ে রফিকুল ইসলামের দুর্যোগ, জীবন-জীবিকা, মানবাধিকার, দুর্নীতি, পরিবেশ, সরকারি-বেসরকারি সেবা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই শতাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আর এ কাজ করতে গিয়ে তাকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। সে সব উৎরে খবরের মূলে গিয়ে তুলে ধরেছেন সবহারা প্রান্তিক মানুষের অসহায়ত্বকে, বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামী জীবনকে।

কাজের ক্ষেত্র:
উপকূলভিত্তিক এই রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়, উপকূলীয় ১৬টি জেলা। এগুলো হচ্ছে- পূর্ব উপকূলের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, মধ্য উপকূলের বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, চাঁদপুর, শরীয়তপুর এবং পশ্চিম উপকূলের খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে উপকূলের তথ্য উঠে এসেছে নীতিনির্ধারক মহলে। সরকারি-বেসরকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

পুরস্কার:
রফিকুল ইসলাম এর আগেও বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে পিআইবি-এটুআই গণমাধ্যম অ্যাওয়ার্ড, অক্টেবরে ইউনিসেফ-মীনা অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে ডিআরইউ-গ্রামীণফোন অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৮ সালে পটুয়াখালীর চরাঞ্চলের সরেজমিন সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার’, ২০০০ সালে বরগুনার প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘এফপিএবি পুরস্কার’, ২০০১ সালে ভোলার শিশুদের নিয়ে ফিচারের জন্য ‘পিআইবি-ইউনিসেফ ফিচার পুরস্কার’, ২০০৬ সালে দুবলার চরের শিশুদের ওপর অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য ‘ইউনিসেফ-মীনা অ্যাওয়ার্ড’, একই বছর দক্ষিণাঞ্চলের নদী ভাঙনের ওপর সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘ইউএনডিপি-বাংলাদেশ সরকার পুরস্কার’, ২০১০ সালে জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্ন উপকূল বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য ‘কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ড’। এছাড়াও ১৯৮৮ সালে বরগুনা জেলা পর্যায়ে ‘একুশে সাহিত্য পুরস্কার’ ও ‘জাতীয় তরুণ সংঘ পুরস্কার’ অর্জন করেন তিনি।

বই:
উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ওপর তথ্যভিত্তিক ‘সিডর: বিপন্ন জনপদের বিবর্ণ রূপ’ বই লিখেছেন তিনি। মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘পটুয়াখালীর চরাঞ্চলের জীবনযাত্রা ও মানবাধিকার’ শীর্ষক সিরিজ প্রতিবেদন সংকলন করে বই প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯৮ সালে।

গবেষণা:
সরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ২০১০ সালে ‘উপকূলীয় অঞ্চলে সিডর আক্রান্ত জনগনের জীবন সুরক্ষায় কৌশল উদ্ভাবন’, ২০০৮ সালে ‘সমুদ্রগামী মৎস্যজীবীদের জীবন জীবিকা’ এবং ২০০৪ সালে ‘উপকূলীয় জেলা বরগুনায় তৃণমূলস্তরের নারীর ক্ষমতায়নে ইউপি নারী সদস্যদের ভূমিকা বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছেন সাংবাদিক ও গবেষক রফিকুল ইসলাম।

এছাড়া বরগুনা জেলা পর্যায়ে টোটাল লিটারেসি মুভমেন্ট (টিএলএম), বেড়িবাঁধে রুটিন মেইনটেন্যান্স কার্যক্রম (আরএমপি) ও ইউনিসেফের ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি (ওআরটি) বিষয়ে প্রভাব যাচাই গবেষণা করেছেন।

ফেলোশিপ:
রফিকুল ইসলাম ‘উপকূলীয় এলাকায় সর্বজনীন সম্পদ ব্যবহার’ বিষয়ে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএফএসডি)’র অধীনে ফেলোশিপ করেছেন ১৯৯৩ সালে।

কর্মরত গণমাধ্যম:
২০০২ সাল থেকে ঢাকায় মূলধারার সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন রফিকুল ইসলাম। এ সময়ে তিনি পলিটিক্যাল বিট, নির্বাচন কমিশন বিট ও জেনারেল বিটে কাজ করেছেন। এর মধ্যে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক সমকাল ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম এবং জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে সংবাদ, ভোরের কাগজ ও মানবজমিনে কাজ করেছেন।

ঢাকায় মূলধারার সাংবাদিকতায় আসার আগে বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন রফিকুল ইসলাম।

সর্বশেষ আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৩:৩৮
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন