বেশি বায়ু দূষণ গাজিপুরে, কম মাদারীপুরে

অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দেশ জুড়ে বায়ু দূষণ বেড়েই চলছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে বায়ু দূষণের শীর্ষে রয়েছে গাজিপুর। আর তুলনামূলক সবচেয়ে কম দূষিত বায়ুর জেলা মাদারীপুর। বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় এ তথ্য ওঠে আসে।

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে’ক্যাপসের দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ু দূষণ সমীক্ষা ২০২১’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রেরের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

তিনি জানান, স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ৬৪ জেলার বায়ুমান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালােচনা করে। গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সর্বমােট ৩১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০২.৪১ মাইক্রোগ্রাম, যা দৈনিক আদর্শ মানের (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে প্রায় ১.৫৭ গুণ বেশি। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ৬৪ জেলার মধ্যে গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশী দূষণ পরিলক্ষিত হয় যার মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২৬৩,৫১ মাইক্রোগ্রাম। গাজীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা ঢাকা (২য়) ও নারায়ণগঞ্জ (৩য়) যার বায়ুমান ছিল যথাক্রমে ২৫২.৯৩ এবং ২২২.৪৫ মাইক্রোগ্রাম। উল্লেখিত সবচেয়ে দূষিত তিনটি শহরের বায়ুমান ছিল বাংলাদেশের আদর্শমানের চেয়ে প্রায় ৪-৫ গুণ বেশী। রাস্তা খোঁড়াখুড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশেপাশের ইটভাটা, ছােট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালাে ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পােড়ানাে এই প্রধান তিনটি শহর দূষণের অন্যতম কারন হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। গবেষণার তথ্যানুযায়ী ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম এবং ১০ম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে হবিগঞ্জ, নােয়াখালী, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম এবং কিশােরগঞ্জ।

অন্যদিকে সবচেয়ে কম দূষিত শহরের মধ্যে রয়েছে মাদারীপুর যার বায়ুমন ছিল প্রতি ঘনমিটাৱে ৪৯.০৮ মাইক্রোগ্রাম। মাদারীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে পটুয়াখালী এবং মেহেরপুর । বায়ু দূষণ কম হওয়ার কারন হিসেবে সরােজমিনে এসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণ গাছপালা এবং প্রাকৃতিক জলাধার লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই ছাড়াও এইসব এলাকায় রাস্তা সংস্কার কাজের পরিমাণ খুব একটা চোখে পড়েনি। ৭ ধরনের ভূমির ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে, সবচেয়ে বেশী বায়ু দূষণ ছিল মিশ্র এলাকায় যার মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১১১,৯০ মাইক্রোগ্রাম। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাণিজ্যিক (১১১.৪ মাইক্রোগ্রাম), রাস্তার সংযুক্তি (১১০,৮ মাইক্রোগ্রাম), আবাসিক শিল্প (১০৬.৭ মাইক্রোগ্রাম) এবং সংবেদনশীল এলাকা (১৭.৩ মাইক্রোগ্রাম)। এদিক থেকে তুলনামূলক কম দূষণ পরিলক্ষিত হয় গ্রামীণ এলাকায় যার মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯৪,০২, মাইক্রোগ্রাম।

ভালাে বায়ুমানের জেলা সমূহের (প্রতি ঘনমিটারে ০-৬৫ মাইক্রোগ্রাম) ৬৪টি জেলার মধ্যে শুধুমাত্র ১০টি (১৫.৬২%) জেলায় বায়ুর মান ভালাে পাওয়া যায় (প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম নিচে) এবং সেই জেলা গুলাে হলাে কুড়িগ্রাম (৬৩,৩৩ মাইক্রোগ্রাম), নাটোর (৬৩,১৯ মাইক্রোগ্রাম), জয়পুরহাট (৫৮.২৪ মাইক্রোগ্রাম), রাজবাড়ী (৫৮,২২ মাইক্রোগ্রাম), রাজশাহী (৫৬.৪১ মাইক্রোগ্রাম), পাবনা (৫৬.২২ মাইক্রোগ্রাম), সিরাজগঞ্জ (৫৫.২ মাইক্রোগ্রাম), মেহেরপুর (৫৩,৩৭ মাইক্রোগ্রাম), পটুয়াখালী (৫১.৪২ মাইক্রোগ্রাম), এবং মাদারীপুর (৪৯,০৮ মাইক্রোগ্রাম)। ভৌগােলিকভাবে এই জেলা গুলাের অবস্থান নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায়, ফলে দূষণের বিস্তৃতি কম হওয়ার একটি কারন হতে পারে। রাজশাহী শহরে ভালাে মানের বায় পরিলক্ষিত হওয়ার পেছনে রাজশাহী শহরের কর্তৃপক্ষের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।


গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) সমগ্র দেশব্যাপী গত বছর ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জেলার জেলা শহর গুলােতে এ ধরনের ভূমির ব্যবহারের উপর নির্ভর করে ৩১৬৩টি স্থানের বস্তুকণা মান পর্যবেক্ষণ করে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালােচনা করে। এই গবেষণায় ৬৪টি জেলা থেকে সংবেদনশীল এলাকা মােট ৫৩১টি (১৬.৭৯%), আবাসিক এলাকা ৪৪০টি (১৩.৯১%), মিশ্র এলাকা ৪০৭টি (১২.৮৭%), বাণিজ্যিক এলাকা ৫৭৫টি (১৮.১৮%), রাস্তার সংযুক্তি এলাকা ৩৫৮টি (১১.৩২%), শিল্প এলাকার ৪৩২টি (১৩,৬৬%) এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ৪২০টি (১৩.২৮%) তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এই স্থানগুলাে থেকে স্বয়ংক্রিয় এয়ার কোয়ালিটি মনিটর ব্যবহার করে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তীতে SPss ও ArcGIS সফটওয়্যার ব্যবহার করে বায়ুর মান বিশ্লেষণ করা হয়।


সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলী নকী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী প্রমুখ।

সর্বশেষ আপডেট: ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন