আবহাওয়া আর অনাহার অসুস্থ করে দিচ্ছে পালংখালির রোহিঙ্গাদের

এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পিতৃমাতৃহীন শিশুও রয়েছে বলে প্রাথমিক হিসেবে জানা যাচ্ছে।

কক্সবাজার সীমান্তে নতুন করে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা, দুদিনের বেশী সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা সবচাইতে সঙ্গীন।

এদের আনুমানিক সংখ্যা ১৫ হাজার বলে উল্লেখ করছেন কর্মকর্তারা, যদিও তাদের গণনা ও যাচাই বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়নি এখনো।

এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পিতৃমাতৃহীন শিশুও রয়েছে বলে প্রাথমিক হিসেবে জানা যাচ্ছে।

ধানক্ষেতের আলের উপর খোলা জায়গায় তাদের থাকতে হচ্ছে।

কেউ কেউ সংগে আনা পলিথিন টানিয়ে একটু ছাউনি তৈরি করেছেন।

রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অনেকেই অসুস্থ হয়ে গেছেন।

কয়েকজন তরুনকে দেখা গেল বৃদ্ধা পিতা-মাতাকে কাঁধে করে নিয়ে ইতিউতি ছুটছেন চিকিৎসার আশায়।

এক জায়গায় জড়ো হয়েছেন কিছু পিতামাতা।

তাদের কোলে কয়েকটি শিশু, সবাই অসুস্থ।

এদের মধ্যে মামুনুর নামে একজন বছর দুয়েকের একটি শিশুকে কোলে নিয়ে বিজিবির সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবার চেষ্টা করছিলেন।

শিশুটি নির্জিব হয়ে পড়েছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

মামুনুর বলছিলেন, “বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে শুকিয়ে তার শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন তার ডায়রিয়ার লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছে”।

তার পাশে আরো দুজন মহিলা শিশু কোলে দাড়িয়ে ছিলেন, তাদেরও একই অবস্থা। নির্জিব। পানিশুন্যতার লক্ষ্মণ স্পষ্ট।

একজন গর্ভবতী মায়ের সাথে কথা হল। তার পা ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। বলছিলেন, ৫ দিন ধরে হাটছেন তিনি। আর পারছেন না। পুরো একটি তিন না খেয়ে আছেন তিনি।

চার মাসের গর্ভবতী তিনি।

আরেক তরুণকে দেখা গেলো তার স্ত্রীকে ধরে এগোনোর চেষ্টা করছেন। স্ত্রীটি স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে সংজ্ঞা হারিয়েছেন।

জুবায়েরা নামের এক মহিলা তিনটি নগ্ন শিশুকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তা ধরে এগোচ্ছিলেন।

একটি কোলে, বাকি দুটো তার হাতে ধরা। তাদের সবারই কাদায় পানিতে মাখামাখি অবস্থা।

কিচ্ছুক্ষণ আগে এখানে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। এখন তালুফাটা রোদ।

জুবায়েরা বলছিলেন, দুমাস আগে তার স্বামীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। বনে জঙ্গলে কাঠ কুড়িয়ে চলতো এতদিন। এখন আর পারছেন না। তাই কোলের শিশুদের নিয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তিনি চলে এসেছেন।

সীমান্ত পেরিয়ে গত সোমবার তিনি বাংলাদেশে এসে ঢুকেছেন। কিন্তু সেখানেই তাদের আটকে দিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

তিনি আরো বলছিলেন, তিনি ও তার সন্তানেরা দুদিন ধরে কিছু খাননি। মাথার উপর ছাউনি নেই।

সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদেরকে শুন্যরেখা বরাবর আটকে রেখেছে।

বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শরনার্থী শিবিরগুলো থেকে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এবং যাচাই বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে এখানেই থাকতে হবে।

কতদিন তাদের সেখানে থাকতে হবে স্পষ্ট নয়।

জাতিসংঘ শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এই যাচাই বাছাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করবার আহ্বান জানিয়েছেন।

অবশ্য জরুরী সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এখানে এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে।

তারা অতি অসুস্থ মানুষগুলোকে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে ডেকে এনে চিকিৎসা দিচ্ছে।

কিন্তু সেখান থেকে চিকিৎসা পাওয়ার পর আবার এদেরকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে সীমান্তের শুন্যরেখার কাছে।

জাতিসংঘ এখানে কিছু খাবার পানি ও বিস্কুট সরবরাহ করেছে।

আর বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এখানে এসে কলেরার টিকা খাইয়ে গেছে।

কিন্তু কাউকেই একচুলো নড়তে দেয়া হচ্ছে না এখান থেকে।

এরই মধ্যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, বাংলাদেশে আসবার জন্য সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশের শুন্যরেখা বরাবর অপেক্ষা করছে আরো হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

আজ অথবা দুএকদিনের মধ্যে এরাও যদি চলে আসে তাহলে এই আনজুমপাড়ায় মানবিক পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে, সেটা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরাট সংশয়।

সর্বশেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৬:৫২
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন