শরণার্থীদের প্রতি দেশের মানুষের মমত্ববোধ প্রসঙ্গে এমন মমত্ববোধ জীবনে দেখিনি: ফিলিপ্পো

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি।UNHCR/Susan Hopper
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি।
ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনার বলেন, শরণার্থীরা যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, তা সহজে ভোলার নয়। তাদের শরীরের ক্ষত হয়তো সেরে যাবে, কিন্তু মনের ক্ষত সারতে বহুদিন লাগবে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ যে মমত্ববোধ দেখিয়েছে, তা তিনি তাঁর কর্মজীবনে কখনো দেখেননি।

আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ‘জাতিসংঘের অধিবেশন সমাপ্ত না করেই আমি বাংলাদেশে চলে এসেছি। আমি সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী ছিলাম। তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। আমি আবারও বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে শরণার্থীদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, সেখানে বাংলাদেশ সরকার ও মানুষ যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ দেখিয়েছে, তা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।’

গ্র্যান্ডি আরও বলেন, এই মুহূর্তে ত্রাণ তৎপরতা কিছুটা অগোছালো মনে হয়েছে। কিন্তু মানুষের সহযোগিতা খাটো করে দেখা যাবে না। এই মুহূর্তে এ সহযোগিতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।

শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন তাঁর কথা হয়েছে, তখন তিনি সমস্যা সমাধানের বিষয়টি মাথায় রাখার অনুরোধ করেছেন। এ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য সুস্পষ্টভাবে মিয়ানমারের সহিংসতা দায়ী। এখনই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে রাখাইনের উত্তরে প্রবেশ করতে দিতে হবে। ইয়াঙ্গুনে ইউএনএইচসিআরের অফিস আছে কিন্তু তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ্পোকে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি মনে রাখতে বলেছেন। তাঁর মতে, প্রত্যাবাসনের শুরুতেই যে সমস্যার সমাধান করতে হবে, তা হচ্ছে নাগরিকত্বের ইস্যু।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফিলিপ্পো বলেছন, বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে মানুষ এখনো অনেকে চাপের মধ্যে আছে এবং স্থানচ্যুত হয়েছে। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে তারাও সরে যেতে চাইবে। রোহিঙ্গা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে গ্র্যান্ডি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের যে প্রক্রিয়া চলছে, বাংলাদেশ সরকার সে কাজ করছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তারপরেও বাংলাদেশ কাজটি করে চলেছে। এ কাজে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে। জেনেভা থেকে একটি দল এ কাজে যুক্ত হয়েছে। এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রত্যাবাসনের সময় মিয়ানমার কোনো প্রশ্ন তুলবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গ্র্যান্ডি বলেছেন, ইউএনএইচসিআর এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছে।

ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনার গত জুলাই মাসে শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন। এ দফায় শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, শরণার্থীরা যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, তা সহজে ভোলার নয়। তাদের শরীরের ক্ষত হয়তো সেরে যাবে, কিন্তু মনের ক্ষত সারতে বহুদিন লাগবে। তিনি এই শরণার্থী সমস্যাকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি শরণার্থী সমস্যা বলে অভিহিত করেছেন।

সর্বশেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৩:২৫
প্রথম আলো

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন