প্রণব আচার্য্য : জন্মদিনে পুরাণ কথা

কবি প্রণব আচার্য্য
কবি প্রণব আচার্য্য

একদিন এইগাছগুলোর মধ্যে লুটিয়ে পড়া সন্ধ্যে,
ওই আধমরা গাছের ওপর পুর্ণিমার রাত।

প্রণব কোথা থেকে একটি মোটর সাইকেল যোগাড় করলো। জানি না। শুধু
বলল, ‘চল পুর্ণিমা দেখি। প্রকৃতির শোভা দ্যাখবি।’
: পুর্ণিমা যদি চিনতে পারি, দেখার জন্যে নিয়ে যাস রাজগঞ্জে।

মেঠোপথ যেতে যেতে, সবুজ ঘন গাছের সারিতে সারিতে আমরা এক সলতে ছায়া ফেললাম। মোটর সাইকেল নিয়ে পুর্ণিমার আলোয় ভেসে বেড়াতে যাচ্ছি সেখানে।
ঘট্ ঘট্ শব্দে মোটরসাইকেল চলছে।

প্রণবদের আদি বাড়ি রাজগঞ্জ।
সুনশান নিরব একটি এলাকা। শান্ত-ঐতিহ্যময় গ্রাম। এই এলাকায় একটি পৌরানিক কাহিনি আছে। দক্ষিণ সমতট অঞ্চলের দুই শ’ বছরেরও পুরানো একটি কিংবদন্তীর আখ্যান। কমলাসুন্দরির গল্প।

ওদের বাড়িতে নিকোনো উঠোনো চেয়ে চেয়ে দেখলাম পূর্ণিমার সতেজতা-উল্লাস নিমীলিত পূর্ণিমার ¯ওখানে আমিও সংকোচহীন হয়ে উঠলাম।
প্রণব আচার্য্য। আমার বন্ধু। কবিজন বলে ডাকি তাকে। স্কুল কিংবা কলেজ সহপাঠী ছিল না কখনো। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব তার চাইতে কম নয়। দুইজনই একই সাথে একই শহরে পথে হেঁটেছি। একই মহল্লায়। অমাবশ্যা দেখেছি। পুর্ণিমা দেখেছি। ম্যালাদিন জোছনা ¯ওখানে সাঁতরেছি।

কবিতা নিয়ে বহুদিন মাতামাতি করেছি। ভেবে দ্যাখ, রাতে বালুতীর ধরে হেঁটে গেছি। একদিন টান টান করে আমি ধরলাম কবিতা। আমার চোখের পাতা। তুই একটু পরে লেখা শুরু করেছিস। দিস্তায় দিস্তায় কাগুজ উড়িয়েছি। কবিতাপত্র ছাপিয়েছি। তখন তো ভোর হয়নি। তাই পুবদিকে, মানে তখন কী যে জটিলতাহীন। কবিতার রাজ্য নয়, অন্যান্য লেখালেখিতে তুই অনেকবেশি ভোগতৃষ্ণার্ত হয়েছিস। নিজেকে তুই ডাক দিয়েছিস প্রকৃত কবির মতো। তোর লেখায় সোনাঝরে। মাঝে মাঝে ঈর্ষা করি। আবার ভাবি, ঈর্ষা নয়, এ আমার গৌরব। অনেক বেশি রাঙা তোর লেখা। সাহসী। স্পষ্ট। কোনো জড়তা নেই তাতে। পাঠে আমি আন্দোলিত হই। আমার মধ্যে সেগুলোর অভাব একদমই রয়ে গ্যাছে। মূলোচেছদ হয়েছে আমার। জানি, এ নিয়ে তোর মধ্যে কিছুটা বেদনা আছে। কষ্ট আছে তোর, বুঝি সব। আমার আর তোর রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনার মধ্যেও কিছুটা দ্বন্দ্ব আছে কয়েকবছরে ¯্রােতের বিপরীতে মিশে গ্যাছি।

মাঝে মাঝে তোর মনে হয় আমার দিনগুলির মৃত্যু। এই ধুলোর মধ্যে লুটিয়ে পড়া সন্ধ্যে আমাদের বন্ধুত্ব টিকে আছে। তার মধ্যে রয়েছে উচ্চআসনে নিভাঁজ। বন্ধুত্ব নয় শুধু, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাও রয়েছে। আমি যখন কোনো লেখা লিখি, তোকেই প্রথম দেখাই। তোর মতামতকে আমি বেশ গুরুত্ব দেই। তার আগে প্রথম আমি ঢাকায় থাকি। তখন তুই সাগরপাড়ে। সেসময় আমাদের মধ্যে নিয়মিত চিঠির আদান-প্রদান ছিল। স্বপ্নচ্যুত-শরণার্থী আমরা সকলে। শোষণের খেলায় পায়ের নলিতে শেকল পরা।

৩ মে ২০১৭

সর্বশেষ আপডেট: ৬ মে ২০১৭, ১০:৪৬
হাবীব ইমন
কবি ও লেখক

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন