আদিত্যনাথকে বাবার পরামর্শ মনে রেখো, বোরকা পরা নারীরাও ভোট দিয়েছেন

মনে রেখো, বোরকা পরা নারীরাও তোমাকে ভোট দিয়েছেন। তাই সব ধর্মের সবাইকে তোমার সম্মান করা উচিত। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীর উদ্দেশে এসব কথা বলেছেন বাবা আনন্দ সিংহ বিস্ত।

গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৮৪ বছর বয়সী সাবেক ফরেস্ট রেঞ্জার আনন্দ সিংহ ছেলেকে দায়িত্বের কথা মনে করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আদিত্যনাথ যোগীকে রাজ্যের সবার দায়িত্ব নিতে হবে। বোরকা পরা নারীরাও তাঁকে ভোট দিয়েছেন। তাঁকে সব ধর্মের লোককে সম্মান জানাতে হবে; তাঁদের সবার মন জয় করতে হবে।’ স্ত্রী সাবিত্রীকে পাশে বসিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সবার প্রত্যাশা রয়েছে তাঁর (আদিত্যনাথ) প্রতি। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে উত্তর প্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে।

ছেলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় খুবই খুশি আনন্দ ও সাবিত্রী। শুধু পরিবারে নয়, আদিত্যনাথের পুরো গ্রামেই যেন খুশির জোয়ার বইছে। কিন্তু এত কিছুর পরও ছেলেকে দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি সাবেক ফরেস্ট রেঞ্জার আনন্দ। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তর প্রদেশে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। ফলে যে প্রত্যাশা নিয়ে রাজ্যের জনগণ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব এখন আদিত্যনাথের—সে কথা ছেলেকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন আনন্দ সিংহ।

স্ত্রী সাবিত্রীকে নিয়ে পৌরি জেলার পানচুর গ্রামে বসবাস করেন আদিত্যনাথের বাবা আনন্দ সিংহ বিস্ত। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম কয়েক দিনে ছেলে আদিত্যনাথের কাজের গতিপ্রকৃতিতে বাবা আনন্দ সিংহ মোটামুটি খুশি। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিনেই মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলেছেন, এমন শব্দ ব্যবহার করবেন না, যাতে মানুষ মনে আঘাত পায়। শুরু হিসেবে সে যে সত্যিই ভালো কাজ করতে চায়, তা বোঝা যাচ্ছে।’ তবে ছেলের প্রতি বাবার পরামর্শ হলো, ‘হিন্দুত্বের প্রচারক’ হিসেবে আদিত্যনাথের যে পরিচয়, তা মুছতে হবে। ছেলে যেন পুরো রাজ্যবাসীর মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, আনন্দ সিংহ এমনটাই চান।

আদিত্যনাথ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে পরিচিত। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও নানান মন্তব্যের জন্য বরাবরই সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন পুরোহিত থেকে মুখ্যমন্ত্রী বনে যাওয়া আদিত্যনাথ। গো-রক্ষা আন্দোলনের জন্যও তিনি আলোচিত। তিনি নিজেকে ‘গো-সেবক’ বলে থাকেন। গরু রক্ষার বিষয়ে ঢের উত্তেজক মন্তব্য আছে তাঁর।

আদিত্যনাথের পারিবারিক নাম অজয় সিংহ বিস্ত। তরুণ বয়সে পরিবার ছেড়ে দীক্ষা নেন। নাম পাল্টে হন যোগী আদিত্যনাথ। পুরোহিত হওয়ার পর নামেন রাজনীতির ময়দানে। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর জন্ম তৎকালীন অখণ্ড উত্তর প্রদেশের গাড়ওয়ালে ১৯৭২ সালে। গাড়ওয়াল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে স্নাতক করেন। ২১ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন অজয়। উত্তর প্রদেশের পূর্ব প্রান্তের গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মহন্ত অদ্বৈতনাথের শিষ্য হন। দীক্ষা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথ নাম গ্রহণ করেন। পরে গোরক্ষনাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হন।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইকোনমিক টাইমস।

সর্বশেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭, ২১:০০
প্রথম আলো

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন