ভারতে হোলির সময় রঙ দেয়ার নামে নারীদের শ্লীলতাহানি

নির্যাতিতাদের বক্তব্য হল, ‘হোলির সময় ওরকম একটু-আধটু হয়’ বলে স্থানীয় জনতাই অভিযুক্তদের আড়াল করে থাকেন।

উত্তর ভারতের অন্যতম প্রধান উৎসব হোলির সময় রঙ মাখানোর নামে গুণ্ডামি বা মেয়েদের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে বহু ছাত্রী বৃহস্পতিবার পর পর দু’দিন দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

গত ক’দিনের ভেতর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত দুজন ছাত্রী আলাদাভাবে জানিয়েছেন, রাস্তায় চলার সময় তাদের গায়ে পুরুষের বীর্য-ভর্তি বেলুন ছুঁড়ে মারা হয়েছে।

আর এই কদর্য ঘটনা সামনে আসার পরই হোলির সময়ে গুণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুঙ্গে উঠেছে।

দিল্লি পুলিশ যদিও বলছে, তারা এই সব অভিযোগের তদন্ত করছে। কিন্তু নির্যাতিতাদের বক্তব্য হল, ‘হোলির সময় ওরকম একটু-আধটু হয়’ বলে স্থানীয় জনতাই অভিযুক্তদের আড়াল করে থাকেন।

বৃহস্পতিবার সকালেও দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কয়েকশো ছাত্রী।

তাদের দাবি একটাই, আসন্ন হোলিতে উৎসব পালনের নামে তাদের ওপর জোরজবরদস্তি বন্ধ করতে হবে।

বুধবার একই দাবিতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেছিল ‘পিঁজড়া তোড়’ নামে মেয়েদের বন্ধনমুক্তির এক সংগঠন।

ছাত্রীদের এভাবে পথে নামার একটা বড় কারণ সম্প্রতি দক্ষিণ দিল্লিতে লেডি শ্রীরাম কলেজের এক ছাত্রীর গায়ে ছুঁড়ে মারা হয়েছে বীর্য-ভরা বেলুন, আর তিনি নিজেই তার বিবরণ দিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ছাত্রী জানান, “মহল্লার গলির ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের দিকে তাক করে বেলুন ছোঁড়া হয়েছিল, যেটা ফাটার পর দেখা যায় ভেতরে চটচটে আঠার মতো একটা পদার্থ। পরে আমরা বুঝতে পারি, ওটা পুরুষের সিমেন বা বীর্য।”

“আমরা যখন রুখে দাঁড়াই, তখন কিন্তু পাড়ার মহিলারাই এগিয়ে এসে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন - বলেন, ছেলেপিলে তো স্রেফ হোলি খেলছে।”

ছাত্রীদের মিছিল থেকেও কিন্তু দাবি উঠছে, হোলির নামে মেয়েদের ওপর হিংসা বন্ধ করতে হবে, কারণ মেয়েরা তাদের হোলি খেলার ‘হোলিকা’ হতে রাজি নয়।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতা ও পিঁজড়া তোড়ের নাজমা রেহমানি বলছিলেন, “হোলির মতো রঙিন ও বর্ণময় উৎসবের আড়ালে আসলে একটা চরম অন্যায় করা হচ্ছে।”

“এটা নতুন জিনিস নয় … আমাদের কলেজ জীবনেও ক্যাম্পাসে বেলুন ছোঁড়া হত - তবে তাতে থাকত জল বা রং, কিন্তু এখন থাকছে সিমেন। যারা মেয়েদের গায়ে এই ধরনের বেলুন ছুঁড়ছে তাদের উদ্দেশ্যটা একবার ভাবুন! এটা তো কিছুতেই হোলি হতে পারে না”, বলছিলেন তিনি।

জিসাস অ্যান্ড মেরি কলেজের যে ছাত্রীকে গত রোববার বীর্যভর্তি বেলুন ছোঁড়া হয়েছিল, তিনিও এর মধ্যে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন।

ওই ছাত্রীটি বলছিলেন, “ওই ঘটনায় আমি লজ্জিত হইনি। কিন্তু আমার প্রচণ্ড বিরক্ত লেগেছে, ঘেন্নায় বমি পেয়েছে। সিমেন-ভরা বেলুন ছুঁড়ে আসলে আঘাত করা হয়েছে আমার আত্মমর্যাদাকেই।”

আর এক ছাত্রী রাভি জোতওয়ানি বলছিলেন, “উৎসব পালনের নামে বিষয়টাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা কিছুতেই মানা যায় না। কারণ এখানে মেয়েদের হেনস্থা করা হচ্ছে, শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে, এমন কী তাদের গোপণাঙ্গ পর্যন্ত স্পর্শ করা হচ্ছে, আমি নিজেই যার ভুক্তভোগী।”

বীর্য-ভরা বেলুন ছোঁড়ার ঘটনায় দিল্লি পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও তারা তদন্ত শুরু করেছে।

বাহিনীর একজন মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, এবারের হোলিতে তারা সব থানায় এই নির্দেশও পাঠিয়েছেন।

অনিচ্ছুক কারও সঙ্গে হোলি খেলা, কিংবা তাকে রং মাখানো বা বেলুন ছোঁড়া হলে সেটা অপরাধ হিসেবেই দেখা হবে।

রঙের এই উৎসব পালনে ঘন ঘনই আওয়াজ ওঠে - ‘বুড়া না মানো, হোলি হ্যায়’। যার অর্থ হল: অন্যভাবে নিয়ো না, এটা তো হোলি।

কিন্তু দিল্লির অনেক মেয়েই এখন বলছেন, যথেষ্ট হয়েছে, হোলির নামে এই বদমায়েশি এবার বন্ধ করার সময় হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেট: ১ মার্চ ২০১৮, ২২:৫২
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন