কলকাতার আরো একটি স্কুলে কন্যা শিশুকে যৌন নিগ্রহ

  • ভারত
  • ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, ২২:০১
  • বিবিসি বাংলা
  • ৫৭৩০ বার পঠিত
  • মন্তব্য

ভারতের কলকাতায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর ওপরে লাগাতার যৌন নিগ্রহ চালানোর অভিযোগে পুলিশ এক নৃত্য-শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে।

তার বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নিগ্রহ-রোধ আইন - ‘পকসো’র বেশ কয়েকটি ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে।

এ নিয়ে গত কয়েক মাসে কলকাতার তিনটি নামী স্কুলের তিনটি কন্যা-শিশুর ওপরে স্কুলের মধ্যেই যৌন নিগ্রহ চালানোর অভিযোগ উঠল।

আজ শুক্রবার সকাল থেকেই দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক এলাকায় খ্রিস্টান মিশনারিদের পরিচালিত ‘কারমেল প্রাইমারী স্কুল’-এর সামনে অভিভাবকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

তাদের অভিযোগ, দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীটির ওপরে তার নাচের শিক্ষক যে মাস-খানেক ধরেই যৌন নিগ্রহ চালাচ্ছেন, সেটা জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় নি স্কুল। উল্টো, যৌন নিগ্রহের প্রমাণ চাওয়া হয়।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন মেয়েদের স্কুলে কেন পুরুষ শিক্ষক রাখা হবে, তা নিয়েও।

এর আগে দুটি স্কুলের নিচের ক্লাসের ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হওয়া সত্ত্বেও কারমেল স্কুলের ভেতরে কোনো সিসিটিভি লাগানো হয় নি বলে ক্ষোভ জানান অভিভাবকরা।

অভিযুক্ত শিক্ষককে তাদের হাতে তুলে দেওয়ারও দাবী জানাতে থাকেন তারা।

পুলিশ যখন ওই অভিযুক্ত নাচের শিক্ষক সৌমেন রানাকে স্কুল থেকে বার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন অভিভাবকদের হাতে গণপিটুনি খান তিনি। অন্যদিকে স্কুলের ভেতরেই আটকা পড়ে বহু ছাত্রী।

পরে যৌন নিগ্রহের শিকার ছাত্রীর বাবা-মাকেও থানায় নিয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা নেয় পুলিশ।

স্কুল কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমকে শুধু জানিয়েছে যে অভিযুক্ত শিক্ষককে তারা সাসপেন্ড করেছে আর এই বিষয়ে পুলিশই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জেরায় অবশ্য অভিযুক্ত শিক্ষক দাবী করেছেন যে তিনি কোনো ছাত্রীর ওপরে যৌন নিগ্রহ চালান নি। অত ছোট বাচ্চার সঙ্গে যৌন নিগ্রহ করার প্রশ্নই ওঠে না বলেও তিনি জানিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রগুলি বলছে।

ভারতে শিশুদের ওপরে যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের হাজার হাজার ঘটনা সামনে আসছে, এবং সংখ্যাটা প্রতিবছরই বাড়ছে।

জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে প্রায় কুড়ি হাজার শিশু ধর্ষিত হয়েছে আর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও প্রায় ১২,০০০ শিশু। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুটির পরিচিত জনেরাই যৌন নির্যাতন চালান বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

শুধু কন্যা-শিশু নয়, পুত্র-শিশুদের ওপরেও যৌন নির্যাতন চলে ব্যাপক হারে, যদিও একবারই মাত্র, ২০০৭ সালে এ নিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।

সমাজকর্মীরা জানাচ্ছেন, যত যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তার প্রায় ৫০ শতাংশই ছেলেদের ওপরে ঘটে।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন সমাজকর্মীরা মনে করছেন, যৌন নির্যাতন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে আগে যেসব ঘটনা সামনে আসত না, এখন তার থেকে অনেক বেশী সংখ্যায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ছে।

কিন্তু তবুও বহু ঘটনা এখনও জানানো হয় না লোকলজ্জার ভয়ে।

তবে অনেক স্কুলেই বাচ্চাদের ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’-এর পাঠ দেওয়া শুরু হয়েছে, শিশুদের শেখানো হচ্ছে, কেউ যদি খারাপভাবে আদর করে বা ছোঁয়, তাহলে তারা যেন চেপে না গিয়ে মায়ের কাছে বলে দেয়।

যদিও এই শিক্ষাদান এখনও পর্যন্ত মোটামুটিভাবে বেসরকারি স্কুলগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

সর্বশেষ আপডেট: ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, ২২:০১
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন