শিশুর গোসলের খুঁটিনাটি

কুসুম গরম পানি শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো। শীত-গ্রীষ্ম সব সময়ই এ নিয়মটা মেনে চলা প্রয়োজন।Selbe B
কুসুম গরম পানি শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো। শীত-গ্রীষ্ম সব সময়ই এ নিয়মটা মেনে চলা প্রয়োজন।
গরমের সময় শিশুদের প্রতিদিন গোসল করিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। শীতের সময়টায় শীতের প্রকোপ যখন বেশি থাকে, তখন একটু বেশি দিনের বিরতি দেওয়া যায়।

শিশু কখন খাচ্ছে, কতটুকু খাচ্ছে, কখন ঘুমাচ্ছে—সবকিছু নিয়েই মা-বাবার দুশ্চিন্তা। ঋতু বদলানোর এই সময়টাতে গোসল করানোর সময়টা নিয়েও অনেকে দ্বিধায় ভোগেন। কখন গোসল করাতে হবে, কীভাবে গোসল করালে ও সুস্থ থাকে, এসবও সেই ভাবনারই অংশ। জন্মের পর থেকে ২ থেকে ৩ বছর বয়স পর্যন্ত মা-বাবা এসব বিষয় নিয়ে একটু বেশিই ভেবে থাকেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, নবজাতকের বয়স ৩ দিন পূর্ণ হওয়ার পর গোসল করানো যায়। কোনো অবস্থাতেই এর আগে গোসল করানো ঠিক নয়। আবার এই নিয়ম শুধু পূর্ণ গর্ভকাল পেরিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য। যেসব শিশু পূর্ণ গর্ভকালের আগেই জন্মেছে এবং যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তাদের ৩ দিন পরেও গোসল করানো যাবে না।

পূর্ণ গর্ভকালের আগে জন্মানো শিশুদের কখন থেকে গোসল করানো শুরু করা যাবে, এটা নির্ভর করে তার ওজন এবং কতটা গর্ভকাল সে পেরিয়েছে, সেই সময়টার ওপর।

নবজাতকের জন্য জেনে নিন

কুসুম গরম পানি শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো। শীত-গ্রীষ্ম সব সময়ই এ নিয়মটা মেনে চলা প্রয়োজন। পূর্ণ গর্ভকাল পেরোনো শিশুর ৩ দিন থেকে ১৫ দিন বয়স পর্যন্ত সপ্তাহে ১ দিন গোসল করানো ভালো। ১৫ দিন বয়স হয়ে গেলে গরমের সময়টায় তাকে প্রতিদিনই গোসল করানো যায়। আবার এক দিন পর পর করালেও ক্ষতি নেই। তবে পূর্ণ গর্ভকাল পার হয়নি এমন নবজাতকদের সপ্তাহে ১-২ দিন গোসল করাতে হবে। কত সময় ধরে নবজাতককে গোসল করাতে হবে, এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে খুব বেশি সময় ধরে নবজাতককে পানিতে না রাখাই ভালো।

গোসলের আগে-পরে

গোসলের আগে বা পরে তেল মালিশ করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। শিশুর বয়স ১৫ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ত্বকে কোনো ধরনের তেল, লোশন বা পাউডার লাগানো ঠিক নয়।

গোসল করালে ঠান্ডা লাগবে?

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লায়লা ইয়াসমিন বলেন, ‘গোসল করালে শিশুর ঠান্ডা লেগে যাবে, বিষয়টা এমন নয়। কোনো কোনো শিশুর সহজেই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবণতা থাকে, তাদের খুব বেশি সময় পানির সংস্পর্শে রাখা ঠিক নয়। অন্যদের জন্য এমন কোনো নিয়মও নেই।’ তিনি জানালেন, শিশুকে নিয়মিত গোসল করালে সেটি যেমন তাকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, তেমনি আবার নিয়মিত গোসলে শিশু আরামবোধ করে।

শিশুর জন্য সময় ও কাল

গরমের সময় শিশুদের প্রতিদিন গোসল করিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। শীতের সময়টায় শীতের প্রকোপ যখন বেশি থাকে, তখন একটু বেশি দিনের বিরতি দেওয়া যায়। অনেক সময় অসুস্থতার কারণেও ২-১ দিন গোসল বাদ যেতে পারে। তবে গোসল না করালেও মাথাটা একটু ধুয়ে দেওয়া এবং শরীর ভালোভাবে মুছিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।
গরমের সময় একটু বেশিক্ষণ গোসল করালে অসুবিধা নেই। তবে ঠান্ডা আবহাওয়ায় খুব বেশিক্ষণ ধরে শিশুকে গোসল করাবেন না।

নির্দিষ্ট সময় রাখুন

প্রতিদিন শিশুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করানো ভালো—এমনটাই জানালেন লায়লা ইয়াসমিন। দিনের বেলা শিশুর গোসলের জন্য ভালো। তবে কর্মজীবী মায়েরা সকালের তাড়াহুড়ায় শিশুকে গোসল করাতে না পারলে অফিস থেকে ফিরে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করালেও সমস্যা হবে না। তবে যে বেলাতেই গোসল করানো হোক না কেন, শিশুর জন্য অবশ্যই কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।

সাবান-শ্যাম্পু রোজ?

শিশুর ত্বকের উপযোগী সাবান ব্যবহার করলে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয় না। তাই প্রয়োজনে রোজ সাবান লাগাতে পারেন। শিশুর উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহারেও কোনো বাধা নেই।

খাওয়ার সঙ্গে গোসলের সম্পর্ক নেই

গোসলের সময় শিশু খালি পেটে আছে বা ভরা পেটে আছে, এর সঙ্গে সুস্বাস্থ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সুস্থ শিশুর গোসলে মূলত তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই।

সর্বশেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭, ০২:৫৮
প্রথম আলো

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন