পায়ের গঠনজনিত সমস্যা

জন্মের পরে শিশুদের পায়ের গঠনে কিছু ত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু ও পায়ের গঠনও স্বাভাবিক হয়ে যায়।
জন্মের পরে শিশুদের পায়ের গঠনে কিছু ত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু ও পায়ের গঠনও স্বাভাবিক হয়ে যায়।
বেশিরভাগই জন্মগত হলেও হাঁটুর উপরের ও নীচের অংশের অস্বাভাবিক আকৃতি কিন্তু বয়স্কদেরও হতে পারে। জানাচ্ছেন ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়।

জন্মের পরে শিশুদের পায়ের গঠনে কিছু ত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু ও পায়ের গঠনও স্বাভাবিক হয়ে যায়। মুশকিল হল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি পায়ের গঠন না শুধরোয়! অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই কিন্তু পায়ের গঠনজনিত সমস্যা দেখা দেয়। এর পোশাকি নাম ‘জেনু ভ্যালগাম’ ও ‘জেনু ভ্যারাম’। তবে, সঠিক সময়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে, এধরনের সমস্যা কাটিয়ে ওঠাও সম্ভব।

জেনু ‘ভ্যালগাম’ ও ‘ভ্যারাম’

ডাক্তারিশাস্ত্রে ‘জেনু’ মানে হাঁটু আর ‘ভ্যালগাম’ মানে হল পায়ের নীচের দিকের অংশের ডিফরমিটি। এতে হাঁটুর নীচ থেকে পায়ের পাতা অবধি অংশ বাইরের দিকে বেঁকে যায়। আর হাঁটুর উপরের দিকটা ভিতরের দিকে বেঁকে ঢুকে আসে। ফলে, পায়ের আকার স্বাভাবিকের তুলনায় আলাদা হয়। আবার এর ঠিক উলটো অসুখটির নাম জেনু ভ্যারাম। এক্ষেত্রে পায়ের নীচের দিকের অংশ ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। পা ধনুকের মতো বেঁকে যায়।

জন্মের সময় একটি শিশুর পায়ের নীচের দিকের অংশ উলটো থাকে। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে যখন সে হাঁটতে শেখে, তখন তার পায়ের আকৃতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কিন্তু শিশুর তিন-চার বছর বয়স পরেও যদি জেনু ভ্যালগামের লক্ষণ না কমে, তাহলে সেটি প্যাথোলজিকাল সমস্যা বলে ধরা হবে। সাধারণত অসুখটির উত্‌স হল থাই বোন-এর নিম্নাংশ। শিন বোন-এর উপরের অংশেও অনেকসময় সমস্যা থাকতে পারে। বাচ্চাদের রিকেট-এর মতো অসুখের ফলেও পায়ে এরকম ডিফরমিটি হতে পারে। থাই বোন-এর নীচের দিকে কোনও আঘাত লাগলে, ইনফেকশনের কারণে, বিনাইন টিউমারের জন্য এরকম সমস্যা হতে পারে। তবে, একটু বড় হলে নিজে থেকেই যদি সমস্যা না কমে, তাহলে সেটিকে প্যাথোলজিকাল কন্ডিশন বলে।

বড়দের ক্ষেত্রে কোনও ট্রমা বা ইনজুরি এর অন্যতম বড় কারণ। যাঁদের একটু ভ্যালগাম আছে, তাঁদের যদি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকে বা থাইবোনে বা শিনবোনে কোনও ফ্র্যাকচার হয়ে থাকে, তাহলে এঁরা জেনু ভ্যালগামে আক্রান্ত হতেই পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেও বাচ্চাদের হলেও, জেনু ভ্যালগাম যে কোনও বয়সেই হতে পারে। এই অসুখের প্রধান লক্ষণ অবশ্যই পায়ের আকৃতিতে কোনও অস্বাভাবিকত্ব। এই অসুখের ক্ষেত্রে মূলত ক্লিনিকাল ডায়াগনোসিস করা হয়। এরসঙ্গে রেডিওলজিকালি এক্স রে করেও দেখা হয়। ট্রমা বা ইনফেকশনের জন্য হলে অনুরূপ ডায়াগনোসিস করতে হয়।

চিকিৎসা

জেনু ভ্যালগাম কিন্তু খুব একটা সিম্পটম্যাটিক নয়। বাচ্চারা একটু ছোটাছুটি করলে যদি হাঁটুতে ঠোকা লেগে পড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে জেনু ভ্যালগামের সমস্যা রয়েছে। বয়স্কদের ফ্ল্যাট ফুট থাকে। একইসঙ্গে পায়ে ব্যথাও হতে পারে। অনেকসময় এঁদের ক্ষেত্রে মালাইচাকি বেঁকে যায় ও আর্থ্রাইটিস ডেভেলপ করে। জেনু ভ্যালগাম থাকার ফলে সময়ের আগেই আর্থ্রাইটিস হতে পারে। জেনু ভ্যারামের ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিস জাঁকিয়ে বসে আরও দ্রুত। দৈনন্দিন হাঁটাচলা করতে অনেক সময় অসুবিধে হয়। প্রাথমিকভাবে এক্সারসাইজ় করতে দেওয়া হয়। হ্যামস্ট্রিং মাসল ও কোয়াড্রিসেপ মাসল মজবুত করার এক্সারসাইজ়ই মূলত দেওয়া হয়। এতে জয়েন্টের উপর শরীরের ভারের চাপ কিছুটা কমে। এছাড়া স্ট্রেচিং করতে হয়।

যদি এক্সারসাইজ়ে কাজ না হয়, তাহলে অস্টিওটোমি করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হাড়ের অ্যালাইনমেন্ট সার্জারির মাধ্যমে বদলে দেওয়া হয়। পায়ের নীচের দিকের অংশের আকৃতি শুধরে দিতে এটি সাহায্য করে। আবার একটু বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে, যাঁদের কাজকর্ম বিশেষ করতে হয় না, তাঁদের অনেককেই ইউনিকমপার্টমেন্টাল নি রিপ্লেসমেন্ট করানো যেতে পারে। আবার যদি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে সেইমতো চিকিত্‌সা করা হয়। যদি অস্টিওম্যালেশিয়া (ভিটামিন ডি-র অভাব) এই অসুখের কারণ হয়, তাহলে অনেকক্ষেত্রে ওরাল মেডিসিন দেওয়া হতে পারে। ইনফেকশনের জন্য হলেও নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়া হয়। তবে, পায়ের ডিফরমিটি কারেকশন সবক্ষেত্রেই কমন। গোড়ালি ও হাঁটুর মধ্যদেশ যেন সমান্তরাল থাকে।

এ ধরনের সমস্যা ছোটবেলাতেই ধরা পড়লে ভাল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কারেকশন করিয়ে নিতে হবে। তবে, কোনও বিশেষ কারণে বড়দের যদি এই সমস্যা হয়, তাহলেও তাড়াতাড়ি সতর্ক হতে হবে। ইনফ্ল্যামেটরি আর্থ্রোপ্যাথির জন্য হলে এক্সারসাইজ় করতে হবে শুরুর থেকেই। এতে মাসল কারেকশন হবে দ্রুত।

সর্বশেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৭, ১৪:০৬
ডেস্ক রিপোর্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন