নারীর পথচলা

নারীর পথচলা।
নারীর পথচলা।

আজ সকালে আমার বাসার কাজের সহযোগী হালিমা তার মেয়েকে সাথে করে এনেছে । মেয়েটির বয়স ৭ বৎসর ক্লাস ওয়ানে লেখাপড়া করে । গত দুদিন ধরে মেয়ের জ্বর । সে কাজেও আসতে পারেনি । প্রায়ই তার কাজে আসতে দেরীও হয় কারণ হচ্ছে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে তারপর সে আসে । বিষয়টি আমি সহজভাবেই নিয়েছি, উপরন্ত তাকে পরামর্শ দেই, মেয়েটির প্রতি যেন সবসময় খেয়াল রাখে ।

চারপাশে যে ভাবে মেয়ে শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সে বিষয়গুলোও নিয়ে তার সাথে আলোচনা করি । জ্বর শরীরে কেন মেয়েটিকে নিয়ে এসেছে জানতে চাইলে ,হালিমা বলে ‘কি করব ? ওর বাবা সকালে যায় রাতে ফিরে ,একটা যে সন্তান তার ভালমন্দ কোন কিছুই সে দেখে না । আমারেই সব করতে হয় ।’ এই চিরাচরিত সত্য কথাটি জ্ঞান হবার পর হতে শূনে আসছি । চুপ হয়ে রইলাম ।

আমার বহু নারী সহকর্মী, বান্ধবী, আমার পরিবারে, অর্থাৎ চারপাশে দেখেছি এখনও দেখছি সন্তানদের স্কুল হতে আনা নেয়া হতে শূরু করে ঘরকন্যা ,চাকুরী ,যাবতীয় কাজ মায়েরাই করে থাকেন । সামাজিকরণের নিয়মে সমাজের কাছে এটাই নাকি নিয়ম ।

আমার বাসার ৪নং রোড়ে ঢুকতেই কাল সন্ধ্যায় চোখে পড়লো ,৭০বৎসরের এক বৃদ্ধা কাঁদছে । দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল ।কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম চাচী আপনি কাঁদছেন কেন ? আপনার বাড়ি কোথায় ? আমাকে অবাক করে দিয়ে ঐ বৃদ্ধা বললেন মাগো মাইয়্যা মানুষের আবার বাড়ি ? স্বামী মইরা যাবার পর দুইডা পোলারে বড় করছি । কত মাইনসে আমারে আবার বিয়া দিতে চাইছে ,বিয়া করি নাই পোলা দুইডার জন্যে আজ হেই পোলারা আমারে, বলেই আবার কাঁদতে থাকে । আপনার ছেলেরা কোথায় ? ‘মাগো বড় পোলা বউ পোলাপান নিয়া গাবতলী থাকে আর ছোটঠা বসিলাতে শ্বশুরবাড়ির ঘরজামাই । আমি তাগো কেউ না ,আমি কই যামু মা ?রাস্তায় আমার ঘর । এহন মইরা গেলেই বাঁচি । তয় বেড়ী বাঁধে আমার এক বইনের মাইয়া আমারে দেহাশূনা করে । আমার পোলা নাহ হইহা যদি দুইডা মাইয়্যা হইতো ,তাইলে আমারে দেইখা রাখতো।’

আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল, এসব শূনতে আর ভাল লাগছিল না, আর কত এসব দেখবো শূনবো । পাশের মুদিখানা দোকান হতে পাউরুটি বিস্কুট কিনে দিলাম সাথে কিছু টাকা । বাসার দিকে পা বাড়ালাম । ভাবতে কষ্ট হয়, এই জগৎ সংসারের সবকিছুর দায় যেন মায়েদের । মায়েরা শত প্রতিূলতার মাঝেও সন্তানদের আগলে রাখেন । কোন কিছুর অভাব বা কষ্ট সন্তানরা যেন না পায় ,তার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় । একজন ছেলের কাছে তার বৌ বাচ্চারা বোঝা হয় না ,,কিন্তু বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তার হতভাগা বৃদ্ধ মা-টি ।

ধিক্কার ..সেসব সন্তানদের । এসব সন্তানরা জীবিত থাকতেও ভাল কিছু করতে পারে না আর মরে যাবার পরও যাবে জাহান্নামে । আমাদের পবিত্র আল কোারানে আছে ‘মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত’ এটা জানার পরও ঐসব কূলাঙ্গার সন্তানেরা কেন মা কে কষ্ট দেয় ত সত্যিই দুঃখজনক ।

সমাজের ধনী -গরীব ,গ্রাম- শহর ,শিক্ষিত -অশিক্ষিত সর্বত্রই এসব চিত্র আমরা দেখছি । পুরুষতান্ত্রিকতা হতে বের হয়ে এসে সবাই নারীর পাশে দাঁড়াতে হবে ,নারীকে সম্মান করতে হবে ,নারীর সব কাজে পুরুষেরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে । সমাজের সামাজিকরণ প্রথা গুলোতে নারী ও পুরুষের সমতাকরণ দিকটি লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে । সমাজ বা পুরুষতান্তিকতা এত সহজেই নারীকে মূল্যায়ন করবে না ,তবে সমাজের মানুষদের মাইনসেটের পরিবর্তন আনতে হলে ,,রাষ্ট্র ,সমাজ .নারী পুরুষ সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করে পরিবর্তন আনতে হবে । আমরা চাই ,নারী তার যোগ্য সম্মানটুকু পাবে আর মা এবং সন্তানের সম্পর্ক থাকবে চির অটুট ।

সর্বশেষ আপডেট: ৩ নভেম্বর ২০১৭, ১০:১৭
রেহানা আক্তার
উপদেস্টা, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার, ষ্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন