ষাঁড়ের ঠিক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছোট্ট মেয়েটি। ঝুঁটি করে বাঁধা চুল। বাতাসে উড়ছে ফ্রক। কোমরে হাত দিয়ে গোঁয়ার ষাঁড়টিকে রুখতে যেন উদ্যত সে। নারীবৈষম্যের প্রতি মনোযোগ কাড়তে এবং করপোরেট জগতে বেতনবৈষম্যের দিকে নজর ফেরাতে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় মূর্ত এই শিশুকন্যা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ম্যানহাটনের সেই বিখ্যাত ব্রোঞ্জের ষাঁড়ের সামনে দাঁড় করানো হয়েছে তেজস্বী এই শিশুকন্যার ব্রোঞ্জর মূর্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ১৯৮৯ সালে পিতলের ওই ষাঁড়ের মূর্তি স্থাপন করা হয়। ম্যানহাটনে ‘ওয়াল স্ট্রিট বুল’ নামের ষাঁড়ের এই মূর্তিটি স্থাপনের পর থেকেই তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ এই মূর্তি। এটাকে ওয়াল স্ট্রিটের আইকন বলা হয়ে থাকে। ইতালীয় বংশোদ্ভূত শিল্পী আর্তুরো দি মদিকা ষাঁড়ের মূর্তিটি গড়ে তোলেন। ১৯৮৭ সালে বাজার-বিপর্যয়ের বিপরীতে ‘মার্কিন জনগণের শক্তি ও সামর্থ্যের’ প্রতীক হিসেবে এই মূর্তি স্থাপন করা হয়। জনপ্রিয়তার কারণে পরে সেটিকে সেখানেই রেখে দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ৮ মার্চ ষাঁড়ের ওই মূর্তির সামনে স্থাপন করা হয় ‘ফিয়ারলেস গার্ল’ নামের অকুতোভয় মেয়েটির পিতলের মূর্তি। আর স্থাপনের পর থেকে এই মূর্তিও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পর্যটকেরা মূর্তিটির সামনে ভিড় করে ছবি তোলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ফিয়ারলেস গার্লের মূর্তি আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সেখানে রাখা হবে।
নিউইয়র্কের মেয়র বিল দি ব্লাজিও বলেছেন, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই মেয়ের মূর্তি ওয়াল স্ট্রিট ষাঁড়ের মূর্তিটির সামনে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত রাখা হবে। তিনি বলেছেন, সংশ্লিষ্ট নগরভবন সংস্থা এই মতামত দিয়েছিল।
লিঙ্গবৈষম্য এবং নারী-পুরুষের বেতনবৈষম্যের প্রতি করপোরেট বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ফিয়ারলেস গার্লের মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবেই তা পর্যটকদের নজর কাড়ে। গত রোববার এই মূর্তি সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল।
মূর্তিটি পর্যটকদের পাশাপাশি নিউইয়র্কবাসীর কাছেও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
শিল্পী ক্রিসটেন ভিসবালের গড়া চার ফুট লম্বা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে গতকাল সোমবার মেয়র ব্লাজিও বলেন, ‘এটা নিউইয়র্কবাসীর কাছে অনেক বেশি কিছু। মূর্তিটি ছিল ভয়ের ঊর্ধ্বে, ক্ষমতার ঊর্ধ্বে, নিজের ভেতরের শক্তির কোনটি সঠিক, তা খুঁজে বের করতে সক্ষম। যে মুহূর্তে আমাদের উদ্দীপনা প্রয়োজন, সেই সময় সে আমাদের উদ্দীপনা জোগায়।’
শিল্পীকে সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিট গ্লোবাল অ্যাডভাইজরস (এসএসজিএ) বলছে, মেয়েটির এই মূর্তি ভবিষ্যৎকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গড়ে চারটি প্রতিষ্ঠানের একটির বোর্ডে কোনো নারী নেই।
পাঠকের মন্তব্য