শিশু গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষার দাবি

গৃহ শিশুশ্রম বাংলাদেশে একটি জটিল সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশের প্রচলিত কোন আইনেই শ্রম হিসেবে এই কাজটির কোন স্বীকৃতি নেই। যেকোন বিবেচনায় এটি শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের তালিকায় এর উল্লেখ নেই। এছাড়া জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৭ লাখ শিশু শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও তাদের মধ্যে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের কোন উল্লেখ নাই। গৃহ শিশুশ্রম সবসময়েই উপেক্ষিত থেকে গেছে।

সোমবার ডেইলি স্টার ভবনে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের আয়োজনে এবং টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস ও গ্লোবাল মার্চ এগেইনস্ট চাইল্ড লেবারের সহায়তায় ‘গৃহ শিশুশ্রম এবং মানবাধিকারঃ সুরক্ষা, চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এমন তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানবাধিকার কর্মী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা আগের থেকে অনেক উন্নত হলেও শিশুগৃহ শ্রমিকদের প্রতি মানুষের সাংস্কৃতিক চিন্তা ভাবনার খুব একটা উন্নতি হয় নি। তাছাড়া স্বল্প বেতনে কাজে রাখার জন্য মেয়ে গৃহকর্মীদেরকে কাজে নেওয়ার ব্যাপারে বেশি অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। এই পর্যন্ত অনেক ভয়ানক ভয়ানক শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা আমরা দেখতে পেরেছি। কিন্তু এর মধ্যে বেশিরভাগরই বিচারকাজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় নি। এর আগেই মামলার সমঝোতা করা হয়েছে। যার কারণে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীর খুব একটা পরিবর্তন হয় নি। এছাড়া শিশু গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করলেও কোন আইন প্রণয়ন করা হয় নি। যার ফলে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের সঠিক বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠে না। শিশু গৃহ কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে এদেরকে আইনের মাধ্যমে স্বীকৃতির মধ্যে আনতে হবে।

শাপলা নীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমোকো উচিয়ামা বলেন, যে সকল মেয়েরা গৃহ কর্মী হিসেবে বাসায় কাজ করে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ সময়ও বিশ্রামের সুযোগ পায় না। এমনকি তারা কাজ করে টাকাও পায় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বেতন দেওয়া হয় তাদের অভিভাবকের কাছে। তিনি আরও বলেন, শিশু গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য গৃহীত নীতিমালার বাস্তবায়ন না করলে তাদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হবে না। টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির বলেন, সরকার আইএলও কনভেনশন ১৮৯ এখনো অনুমোদন না করলেও শিশু গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। তবে তা বাস্তবায়নের অভাবে খুব একটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে না। সেই সাথে গৃহ শিশুকর্মী শিশুশ্রমের অন্যতম একটি অপ্রাতিষ্ঠানিকখাত যেখানে বিশাল সংখ্যক শিশু শ্রমে নিয়োজিত আছে এবং প্রায়শই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কাজেই তা বন্ধ করতে হলে এদেরকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি যা এখনো করা হয় নি।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারম্যান ডঃ খাজা সামসুল হুদা বলেন, গৃহকর্মী নির্যাতন রোধের জন্য প্রথমে দরকার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। আর এই জন্য প্রয়োজন ব্যাপক আকারে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। সংস্থাটির পরিচালক আবদুস সহিদ মাহমুদ বলেন, সরকার শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজের তালিকা তৈরি করলেও গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুশ্রম এর চেয়েও বেশি অনিরাপদ। কেননা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণখাতে শিশুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হলেও গৃহকর্মে চার দেয়ালের ভিতরে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হলে পারতপক্ষে কারও পক্ষেই তা জানা সম্ভব হয় না। তাই গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুশ্রমকে অত্যনÍ ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ) শিশু অধিকার বিষয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংগঠন বা এনজিও সমূহের একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক। বিএসএএফ বাংলাদেশে শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন এবং ইউপিআর এর সুপারিশের আলোকে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করছে।

সর্বশেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:০৭
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন