মেঘের সাথে বন্ধুত্ব…

মিসবাহ হাসান: এই ব্যস্তময় শহর থেকে একটু প্রকৃতির সাথে মিশতে কার না মন চায়। শহর থেকে একটু দূরে কোলাহলমুক্ত নির্জনতা, চারদিকে সবুজ গাছপালা, মাঝে মাঝে পশু-পাখির ডাক, শীতল বাতাসে মেঘের সাথে খেলা করা । সেতো এক অন্যরকম ভালোলাগা। এই রোমাঞ্চকর অনুভূতি আপনাকে দেবে এক পাহাড়সম মানসিক প্রশান্তি। আর আপনি যদি দুর্গম পাহাড়ি পথে হাঁটতে পছন্দ করেন, তবে চন্দ্রনাথ পাহাড় আপনার জন্যই।

সেদিন সকালে ঘুম ভাঙলো ভাইয়ার ম্যাসেজ। লেখা ছিলো আমরা রাত ১০.০০ টায় সীতাকুন্ডু যাচ্ছি। বেশ ভালোই লাগছিলো। ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর পৌঁছলাম কমলাপুর রেলস্টেশনে। হুড়াহুড়ির পর ছিট পেলাম না। ট্রেন ছাড়ার আগে ট্রেন মাস্টারের সাথে কথাবলে প্রতি সিটে ১০০টাকা বেশী গুনে একটি বগি দখলে নিলাম। বাংলাদেশের রেল খাতে দুর্নীতির একটি কারণ টিকেট জালিয়াতি। রাতে একটু আরামে সফর করতে ১০০ টাকা খুব বেশী গায়ে বাধে না। তাই নিরীহ বাঙ্গালী দুর্নীতির আশ্রয় নেয়।

পরেরদিন ভোরে পৌঁছলাম সীতাকুন্ডু স্টেশনে। স্টেশন থেকে পাহাড়ের উপর মেঘের রাশি দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন এক মেঘে ঢাকা শহর। সেখান থেকে বেশ কিছুদূর হাঁটতেই সীতাকুন্ডু বাজার। সেখানে আমরা সকালের নাস্তা শেষ করে পাহাড় অভিমুখে যাত্রা শুরু করলাম।

বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মনে হলো সীতাকুণ্ড যেন মন্দিরের শহর। রাস্তার দুই দিকেই বিভিন্ন ধরনের অনেক মন্দির যা নজর কাড়ার মতো। সিএনজি ড্রাইভারের কাছে জানতে পারলাম, এই ছোট্ট এলাকায় প্রায় আড়াইশোর বেশি মন্দির আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ব্যতিক্রম কিছু দেখলেই মনে করে তাদের ইশ্বর এখানে লুক্কায়িতো। তাই হয়ত তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে এই পাহাড়ী এলাকাকে বেছে নিয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ের একটু গভীরে গেলে চোখে পড়বে জুমক্ষেত এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা ফুলের বাগান।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের বিশালতা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সীতাকুণ্ডকে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখা যায়। এই ঝর্ণার কাছ থেকে পাহাড়ে উঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পাহাড়ে উঠা-নামার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের পথটি সম্পূর্ণই পাহাড়ি। সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামুলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামাতে সহজ হয়। কিন্তু বিধি বাম। আমরা কয়েকজন চললাম উল্টো পথে। সিঁড়ি পথে উপরে উঠলাম আর নামলাম পাহাড়ি পথে।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১২০০ ফুট। হেঁটে উঠতে একটু পরিশ্রমের কাজ হলেও আপনার হাঁটার উপর নির্ভর করবে চূড়ায় পৌঁছতে কতক্ষণ লাগবে। প্রথমদিকে তেমন কষ্ট না হলেও বেশ উপরে দিকে উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে। কখনওবা চলতে হবে এক পাশে পাহাড়ের গা ঘেঁষে আর অন্য পাশে খাদ নিয়ে। একবার পা ফসকালেই পটল তোলা সুনিশ্চিত। তাই নিরাপদে এই পাহপড়ি পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য একমাত্র লাঠিই নিত্য সঙ্গি । চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দ ।রত্বে ছোট ছোট টং দোকান আছে সেগুলিতে হালকা খাবার পাওয়া যায়, তবে টাকা গুনতে হয় কয়েকগুণ বেশি। যত উপরের দোকান তত দাম বেশি। ভালো হয় উঠার সময় সাথে প্রয়োজনমত পানি ও কিছু শুকনো খাবার সাথে রাখলে।

প্রায় এক ঘন্টা পর আমরা পৌঁছলাম পাহাড়ের চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দিরে। সীতাকুণ্ডের সর্বোচ্চ পাহাড় চন্দ্রনাথে দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ গাছপালার দিকে। প্রশান্তিতে জুড়িয়ে যাবে চোখ। আর ভেসে বেড়ানো মেঘের ভেলার সাথে খেলতে খেলতে বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে আপনার…

সর্বশেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮, ০২:০৯
ডেস্ক রিপোর্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন