দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

  • ভ্রমন
  • ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৪৯
  • ছাইফুল ইসলাম মাছুম
  • ৪১৭৫ বার পঠিত
  • মন্তব্য
সিলেটের জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং-এর মনোমুঙ্কর সৌন্দর্য।
সিলেটের জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং-এর মনোমুঙ্কর সৌন্দর্য।

সময় পেলে বাংলাদেশের অনেক ভ্রমন বিলাসিরা প্রচুর অর্থ ব্যায় করে বিদেশে ঘুরতে যান। অথচ নিজ দেশেই রয়েছে আকর্ষনীয় অনেক পর্যটন কেন্দ্র। এই উপলদ্ধি থেকেই হয়তো কবিগুরু রবি ঠাকুর লিখেছেন

‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/
একটি ধানের শিষের উপরে/ একটি শিশিরবিন্দু।’
অপরূপ সৌন্দর্যের আমাদের এই বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রতিবছর ভিড় জমিয়ে থাকেন। প্রাচীন স্থাপনা, পাহাড়ে অভিযাত্রা, নদীতে নৌকা ভ্রমণ, সবুজের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলা, এমনকি মেঘের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো চোখ জুড়ানো পর্যটন স্থান রয়েছে। আজ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে বাংলাদেশের বিখ্যাত কিছু পর্যটন কেন্দ্রের পরিচিতি তুলে ধরা হলো:

নীলগিরি : নীলগিরি দেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। বান্দরবানের থানচি উপজেলায় এর অবস্থান। মেঘের সঙ্গে মিতালি করে এখানে মেঘ ছোঁয়ার সুযোগ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নীলগিরিতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অপরূপ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চে অবস্থানের কারণে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র সর্বদা মেঘমণ্ডিত আর এটাই এই পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে নীলগিরি ধীরে ধীরে দেশব্যাপী মানুষের কাছে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত লাভ করতে শুরু করে। এই পুরো পর্যটন কেন্দ্রটিই প্রতিষ্ঠা করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং তারাই এর পরিচালনা করে থাকেন।

বিরিশিরি : বিরিশিরি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম। এটি এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ বিজয়পুর চীনামাটির খনি। সাদা মাটি পানির রংকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে। বিরিশিরি কালচারাল একাডেমিতে উপজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা করা হয়। এখানে প্রতি বছর উপজাতীয়দের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর জনসমাগম হয়।

বিছানাকান্দি : সিলেটের পর্যটন স্বর্গ। দেশের সীমান্তঘেরা পাথরের বিছানা ও মেঘালয় পাহাড় থেকে আসা ঠাণ্ডা পানি। পাশেই পাহাড়ি সবুজের সমারোহ। ছোট বড় পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা বিছানাকান্দিতে সৃষ্টি করেছে এক মনোরম পরিবেশ। বিছানাকান্দি পর্যটন এলাকাটি মূলত একটি পাথর কোয়েরি যেখানে নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়। এই জায়গায় খাসিয়া পর্বতের বিভিন্ন স্তর এসে একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে। খাসিয়া পর্বত থেকে নেমে আসা একটি ঝরনা এখানে একটি হ্রদের সৃষ্টি করেছে যা পিয়াইন নদীর সাথে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। এখানকার শিলা-পাথর গুলো একদম প্রাকৃতিক এবং এগুলো পাহাড়ি ঢলের সাথে পানির মাধ্যমে নেমে আসে।

মহাস্থানগড় : ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পুরাকীর্তিটি বগুড়ায় অবস্থিত। পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল বর্তমান বগুড়া মহাস্থানগড়। মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং সেন আমলেও বগুড়ার বিশেষ প্রশাসনিক গুরুত্ব ছিল। করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে এটির অবস্থিত। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পুন্ড্রনগরে এসেছিলেন। ভ্রমণের ধারাবিবরণীতে তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার উল্লেখ করে বর্ণনা দেন। বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা তখন মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে৷ এরপর তাঁরা বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।

সুন্দরবন : সারা বিশ্বের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলগুলোর মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। বিশ্বের অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন সুন্দরবনে। অপরূপ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জোয়ার-ভাটা বিচিত্র রূপের এ বনকে দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিদিন ভিড় জমান।

আকাশলীনা: জীবনানন্দের কবিতার নামে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জে সুন্দরবনসংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে ২৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম সেন্টার। পূর্ণিমার রাতে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যময় এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে লোভনীয়। যারা অল্প সময়ে সুন্দরবন দেখতে চান তাদের জন্য এটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র। এখানে একটি রেস্টুরেন্ট, পার্কিং স্থান, ছোট জাদুঘরসহ পর্যটকদের জন্য হরেক রকম সুবিধা পাবেন। রাত্রী যাপনের জন্য রয়েছে বিলাস বহুল আবাসিক ব্যবস্থা।

জাফলং : সিলেটের জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং-এর মনোমুঙ্কর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ পর্যটকদের টেনে আনে বার বার। শীতের হিমেল আবহ ভ্রমণপিয়াসী আর পর্যটকদের মনে দোলা দেয়। জাফলং-এর বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়ালে ভারত সীমান্ত-অভ্যন্তরে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড়শ্রেণী দেখা যায়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরণা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও আকর্ষণ করে অনেককে।

নিঝুমদ্বীপ : অপার সম্ভাবনার নিঝুমদ্বীপ নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিণের উপজেলা হাতিয়াতে অবস্থিত। হাতিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে উঠেছে চিরসবুজের দ্বীপ ইউনিয়ন নিঝুমদ্বীপ। মাছ, গাছ, পাখ-পাখালি আর সোনার হরিণের সম্পদ ভাণ্ডার নিঝুমদ্বীপ। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন । নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের জন্য রয়েছে অবকাশের নিঝুম রির্সোট।

কক্সবাজার : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বসেরা সমুদ্রসৈকত। পাহাড়ঘেরা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত। যা কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য কক্সবাজার আদর্শ জায়গা। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্যও বিখ্যাত।

সেন্টমার্টিন : সেন্টমার্টিন হলো বিশ্বের অন্যতম বড় প্রবাল দ্বীপ। অপূর্ব সুন্দর জায়গা সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ডাবের জন্য বিখ্যাত। আপনি সেন্টমার্টিনে পাবেন সুমিষ্ট ডাবের পানি আর শাঁস। দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে আসা যাওয়া করে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে।

বাংলার তাজমহল : বিভিন্ন কারণে সোনারগাঁ বিখ্যাত। কালের বিবর্তনে এখানে বিশ্বের প্রাচীন সপ্তাশ্চর্য আগ্রার তাজমহলের আদলে সোনারগাঁয়ের পেরাব গ্রামে নির্মাণ করা হয়। স্থাপত্যে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বাংলার তাজমহল। এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং তথ্যানুসারে এটি তৈরী করতে মাত্র ৫ বছর এবং USD ৫৮ মিলিয়ন$ খরচ হয়েছে। তাজমহল বাংলাদেশের মালিক আহসানুল্লাহ মনি একজন ধনবান চলচিত্র নির্মাতা। এই তাজমহলের রেপ্লিকাটি তৈরী করা হয়েছে যেন বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ যাদের ভারত গিয়ে প্রকৃত নিদর্শন দেখার সামর্থ নেই তারা যেন তাজমহল দেখার স্বপ্ন পূরন করতে পারেন নিজের দেশে থেকেই।

সর্বশেষ আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:০৩
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন