প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে ফেসবুকে #আমি গুপ্তচর হ্যাশট্যাগ

অনেক সাংবাদিক তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
অনেক সাংবাদিক তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ৩২ ধারায় ঢালাওভাবে বলা হয়েছে, কেউ যদি বিনা অনুমতিতে কোন সরকারি, আধা-সরকারি অফিসে প্রবেশ করে, ছবি তোলে এবং তথ্য যদি ডিজিটালি সংরক্ষণ করে তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তি হবে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে।

সাংবাদিকরা বলছেন, এ আইনের ৩২ ধারাটি কার্যকর হলে সাংবাদিকতার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা ও প্রকাশ করা দুটিই দুরূহ হয়ে উঠবে এবং এটি আসলে দুর্নীতিকেই সুরক্ষা দেবে।

একজন সম্পাদক বলছেন, ৩২ ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মারাত্মক অন্তরায় হবে কারণ এখানে সাংবাদিকতাকে গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বলছেন, ৩২ ধারা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের জন্য উদ্বেগের কোন কারণ নেই।

বাংলাদেশে এখন ফেসবুক খুললেই দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই তাদের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেছেন।

নতুন প্রোফাইলে দেখা যাচ্ছে, তাদের হাতে একটি প্ল্যাকার্ড যেখানে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা ‘আমি গুপ্তচর।’

আর এ প্রতিবাদ শুরু হয়েছে মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদনের পর থেকেই।

কিন্তু কি আছে এই খসড়ায় যা নিয়ে এতো উদ্বেগ এতো প্রতিবাদ?

জবাবে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ৩২ ধারায় ঢালাওভাবে বলা হয়েছে, কেউ যদি বিনা অনুমতিতে কোন সরকারি, আধা-সরকারি অফিসে প্রবেশ করে, ছবি তোলে এবং তথ্য যদি ডিজিটালি সংরক্ষণ করে তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তি হবে।

তিনি বলেন, “পেশাজীবী বিশেষ করে সাংবাদিকদের জন্যে ৩২ ধারা নতুন উটকো ঝামেলা।”

আর এই গুপ্তচরবৃত্তির জন্য প্রস্তাবিত আইনে শাস্তি হিসেবে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

ঢাকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য যিনি সুপরিচিত,

তার মতে আইনটি কার্যকর হলে সংবাদ প্রকাশের জন্য তথ্য সংগ্রহ করাই দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে আর এর ফলে যারা দুর্নীতি করেন তারাই সুরক্ষা পাবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, “তথ্য তো মন্ত্রণালয় বা সংস্থা বা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেই পাই। যখন এ ধরনের নিয়ম করা হবে তখন তো কেউই তথ্য দিতে চাইবে না। আবার নিউজ যখন করি তখন তো প্রমাণ রাখতে হয়। সেটাকেও চ্যালেঞ্জ করলে কাজ করবো কিভাবে?”

এই আইনটির মাধ্যমে সাংবাদিকদের হাত পা বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং ঘুষ ও দুর্নীতিকে জায়েজ করা হচ্ছে বলেই মনে করেন রোজিনা ইসলাম।

এর আগে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার প্রেক্ষাপটে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবিতে সোচ্চার ছিলো গণমাধ্যম কর্মীরা। নানা কর্মসূচিও পালিত হয়েছে এ দাবিতে।

সোমবার খসড়াটি অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ৫৭ ধারার অপরিচ্ছন্ন দিকগুলো বাতিল করেই নতুন আইন করা হয়েছে।

কিন্তু তার সঙ্গে একমত নন দেশের অন্যতম সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।

তিনি বলছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই আইনের খসড়াটি সংসদে পাঠানোর আগেই এটিকে সংশোধন করা উচিত।

তিনি বলেন, “এর ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তন করে ৫৭ ধারার বিকল্প হিসেবে চারটি ধারা আনা হয়েছে। সেগুলো কিন্তু স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কিছুটা অন্তরায়।”

গোলাম সারওয়ার বলেন, “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যেভাবে সাংবাদিকরা কাজ করে সে পথটিতেই কিন্তু অন্তরায় সৃষ্টি করা হয়েছে। এটাকে গুপ্তচরবৃত্তি বলে সেই অপরাধে অপরাধী করা হচ্ছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটুকু করতেই হয়। এটা সারা পৃথিবীতেই আছে।”

আইনের খসড়াটি সংসদে যাওয়ার আগেই এটা নিয়ে আরও বিচার বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন।

তবে গোলাম সারওয়ারের মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

তিনি বলেন, ৩২ ধারা যারা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করেন তাদের জন্য নয় বরং যারা অপরাধী তাদের জন্য এটি করা হয়েছে, তাই এ নিয়ে সৎ সাংবাদিকতা যারা করেন তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

মি চৌধুরী বলছেন, “সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা আসলে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে।” এ কারণেই ৩২ ধারার কারণে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে না বলেই তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারী ২০১৮, ০৫:৩৮
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন