বাংলাদেশে জনপ্রিয়তায় ফুটবলকে কখন টপকালো ক্রিকেট?

“আমার প্রিয় বোলার মোস্তাফিজ, প্রিয় অলরাউন্ডার সাকিব, প্রিয় ব্যাটসম্যান কো‌হ্‌লি”, বলছিল ক্ষুদে ক্রিকেটার জারিফ হাসান। তার বয়েস মোটে ১১ বছর।

স্কুলের সময়টুকু বাদ দিলে, ক্রিকেটই তার ধ্যানজ্ঞান।

সে ঢাকায় এসিসি নামে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের একটি ক্লাবের সদস্য। এরই মধ্যে ক্ষুদেদের ক্লাব টুর্নামেন্টে খেলে সেঞ্চুরি করে ফেলেছে কয়েকটি।

তার মা সুবাহ শিরিন রিফাত তালুকদার বলছেন, “ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেটার ক্রিকেটই ধ্যানজ্ঞান। অবশ্য সে এমন সময় বেড়ে উঠেছে যখন ক্রিকেটে বাংলাদেশের দল সাফল্য পাচ্ছে। এগুলো দেখেই হয়ত তার ভালবাসা আরো বেড়েছে।”

জারিফ হাসানের মতোই এখন বাংলাদেশের অধিকাংশ শিশু কিশোরেরা ক্রিকেটের পাগল।

তাদের আইডল সাকিব-মাশরাফি-মুশফিক-তামিম কিংবা মুস্তাফিজ।

শহর কিংবা গ্রাম, পাড়া কিংবা মহল্লা, যে কোন জায়গাতেই বিকেল বেলা বা ছুটির দিনে এক চিলতে খোলা

জায়গা থাকলেও সেখানে শিশুদের দেখা যায় ক্রিকেট খেলতে।

স্টাম্প হিসেবে তারা ব্যবহার করে গাছের ডাল বা ইট। কেউবা দেয়ালে চক দিয়ে স্টাম্প এঁকে নেয়।

সস্তার ব্যাট আর টেনিস বলে টেপ পেঁচিয়ে খেলে। কারোবা ব্যাটও জোটে না। তখন তাদের হাতে থাকে কাঠের টুকরো।

অথচ ২০/২৫ বছর আগে এটি বাংলাদেশে বিরল দৃশ্য ছিল।

শহরের ছেলেরা ক্রিকেট খেলতো বটে, কিন্তু গ্রামে গঞ্জে পাড়া মহল্লায় ফুটবলই ছিল প্রধান খেলা।

যদিও বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়া কাবাডি। কিন্তু ১৯৯০-এর শেষ ভাগেও শীত কিংবা গ্রীষ্ম, রোদ কিংবা বৃষ্টি, অবসর পেলেই শিশুদের মাততে দেখা যেত ফুটবল নিয়ে।

ফুটবল না পেলে চট গোল করে পেঁচিয়ে কিংবা গাছ থেকে জাম্বুরা পেড়ে তাতেই দমাদম লাথি মারতে দেখা যেত তাদের। এখন পরিস্থিতি বদলেছে।

গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে ক্রীড়া সাংবাদিকতা করছেন দিলু খন্দকার।

তিনি বলছেন, ফুটবলে এক সময় অনেক রোল মডেল ছিল।

সালাহউদ্দিন, কায়সার হামিদ, মুন্নাদের মত তারকা ছিল। তাদের নিয়ে মাতামাতি হতো।

কিন্তু ৯০এর দশকের শেষের দিকে আইসিসি ট্রফি জয়, বাংলাদেশের ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্তি, ঢাকায় বিশ্বকাপ আয়োজন, বাংলাদেশের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ এবং টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি– সব মিলে বাংলাদেশে ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে গেছে ওই সময়টায়।

পরবর্তীকালে ক্রিকেটে রোল মডেল হয়েছে, সম্ভাবনাও বেড়েছে।

এটা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

অন্যদিকে, ফুটবলের অবস্থা বাংলাদেশে দিনদিন খারাপ হওয়ায় জনপ্রিয়তায়ও ভাটা পড়েছে।

আজকাল বাংলাদেশের ফুটবলে আগের মত রোল মডেলও কেউ নেই আর।

তবে মূলত ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার সবচাইতে বেশী কারণ এর ব্যাপক প্রচার, বলছেন দিলু খন্দকার।

“একটা আগামী প্রজন্মের ছেলে ঘরে বসে টিভির নব ঘুরিয়েই দেখছে সাকিব বোলিং করছে,তামিম ব্যাটিং করছে কিংবা মুশফিক ব্যাটিং করছে। তার মনের মধ্যে কিন্তু তৈরি হচ্ছে যে আগামীতে সে ক্রিকেটার হয়ে গড়ে উঠবে”।

“পাশাপাশি ক্রিকেটারদের যে আর্থিক সাপোর্ট সেটা কিন্তু বিরাট সাপোর্ট। পরিবারের অনেকেই কিন্তু এখন ছেলেমেয়েদের ঠেলে দিচ্ছেন ক্রিকেটের দিকে”, বলছিলেন দিলু খন্দকার।

মি. খন্দকারের এই বক্তব্য মিলে যায় জারিফ হাসানের সঙ্গে, যার কথা এই প্রতিবেদনের গোড়াতেই আলাপ করেছি।

জারিফ হাসানের লক্ষ্য বড় হয়ে পেশাদার ক্রিকেটার হওয়া।

সে বলছে, তার মা তার ক্রিকেট খেলাকে অনেক সমর্থন দেন, বিভিন্ন জায়গায় খেলতে গেলে, তার মাই তো তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান।

জারিফ বড় হয়ে ক্রিকেট খেলাকে পেশা হিসেবে নিলে তার মায়ের আপত্তি আছে বলেও মনে হল না।

কিন্তু বাংলাদেশে পেশাদার ফুটবলের এখন যা অবস্থা, তাতে কোন শিশু ভবিষ্যতে পেশাদার ফুটবলার হতে চাইলে, তাতে কোন মা সমর্থন দেবেন, সেটা মনে হয় না। বিবিসি বাংলা।

সর্বশেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭, ০৫:২৭
ডেস্ক রিপোর্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন