রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কী বললেন সু চি?

সু চি তার ভাষণে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। তিনি ‘মুসলিম শরণার্থী’ শব্দ দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তার সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। মিয়ানমারের সংবিধানে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকার করা হয়নি। ১৩৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি পেলেও রোহিঙ্গাদের সে তালিকায় রাখা হয়নি। সু চির ভাষণেও দেখা গেল, তিনি রোহিঙ্গাদের পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে উল্লেখ করলেন না।

অং সান সু চি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে যেকোনো সময় যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত মিয়ানমার।

মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলেছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ও ডিফ্যাক্টো সরকারপ্রধান সু চি। এ দিন টেলিভিশনে সরাসরি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন তিনি।

রাখাইনে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গণতন্ত্রের ‘মানসকন্যা’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ও নোবেলজয়ী সু চি। তবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে এত দিন চুপ করে থাকায় তাকে আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দার মুখে পড়তে হয়। তাকে নিন্দা করে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে এবং তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার দাবিও উঠেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি কথা বললেন।

বৈধ শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়া ও ফেরার পর তাদের সব ধরনের মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেছেন সু চি। তবে এই বৈধতার মানদণ্ড কী হবে, তা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।

সু চি বলেছেন, ‘এই দেশ (মিয়ানমার) থেকে যারা গেছে, তারা যদি শরণার্থী হিসেবে প্রমাণিত হয়, তাহলে কোনো সমস্যা ছাড়াই তাদের গ্রহণ করা হবে এবং তাদের জন্য নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তার পূর্ণ নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।’

যাচাই-বাছাইয়ের পর শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার যে আশ্বাস দিয়েছেন সু চি, তা কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। এর আগে নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার ছেড়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে খুবই কমসংখ্যক মানুষ দীর্ঘ ও জটিল যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে নিজ দেশে ফিরতে পেরেছে। গত বছরের অক্টোবর মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের সময় যেসব রোহিঙ্গা এসেছিল, তারা এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের সংখ্যা ২-৩ লাখের মতো।

জাতিসংঘের হিসাবমতে, গত ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সহিংসতায় প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৪ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাকে কবে, কীভাবে এবং কোন ধরনের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো দিক নিদের্শনা নেই সু চির ভাষণে।

উল্লেখ্য, সু চি তার ভাষণে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। তিনি ‘মুসলিম শরণার্থী’ শব্দ দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তার সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। মিয়ানমারের সংবিধানে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকার করা হয়নি। ১৩৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি পেলেও রোহিঙ্গাদের সে তালিকায় রাখা হয়নি। সু চির ভাষণেও দেখা গেল, তিনি রোহিঙ্গাদের পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে উল্লেখ করলেন না।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার সু চির আশ্বাসের সঙ্গে একমত নন ‘দি রোহিঙ্গাস : ইনসাইড মিয়ানমার’স হাইডেন জেনোসাইড’ বইয়ের লেখক ও সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসির সিনিয়র ফেলো আজিম ইব্রাহিম। তার ভাষ্য, ‘তিনি তাদের ফিরিয়ে নিতে চান… তারা ফিরে কোথায় যাবে? তাদের ঘরবাড়ি, গ্রাম সব ধ্বংস করা হয়েছে।’

রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী বলে মনে করে মিয়ানমার। তাদের দাবি, রোহিঙ্গারা বাঙালি। যে কারণে তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি মিয়ানমার। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে সত্য, রোহিঙ্গারা কয়েক শত বছর ধরে রাখাইন রাজ্যে (সাবেক আরাকান রাজ্য) বসবাস করে আসছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরই মানুষ, মিয়ানমারই তাদের দেশ। রোহিঙ্গারাও বিশ্বাস করে, তারা মিয়ানমারের নাগরিক।

তথ্যসূত্র : রয়টার্স অনলাইন

সর্বশেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০১:৪৫
ডেস্ক রিপোর্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন