রোহিঙ্গা শিশুদের মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নিশ্চিত করুন: এডুকো

মিয়ানমারে নৃশংস সহিংসতার ফলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার তিন বছর পরে, বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারনে স্কুল ও সকল প্রকার শিক্ষার সুযোগ সুবিধা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শিশুরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিশু অধিকার সংস্থা এডুকো। ২৪ আগস্ট গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এই তথ্য জানান।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলছে, বেশিরভাগ শিশু পর্যাপ্ত শিক্ষামূলক উপকরণ ছাড়াই নিজেরা লেখাপড়া করছে বা শিক্ষকদের খুব অল্প নির্দেশনার সহায়তায় স্কুল বন্ধের সময়টা পার করছে। ফলে রোহিঙ্গা শিশুদের মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নিশ্চিত করতে করা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।

এডুকো কক্সবাজারের ইমারজেন্সি রেস্পন্স মিশনের প্রধান, মতিউর রহমান বলেছেন: “তিন বছর আগে তারা যে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিল, তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা শিশু এবং তাদের পরিবারসমূহ শরণার্থী শিবিরগুলোতে নতুন করে শুরু করার জন্য কষ্ট সহ্য করেছে। মহামারীর আগেও কিশোর-কিশোর এবং যুবকদের জন্য শিবিরগুলোতে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা, বৃত্তিমূলক এবং জীবন দক্ষতা শিক্ষার সীমিত সুযোগ ছিল। তবে এই মহামারী বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে শিশুদেরকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রচেষ্টাকে হুমকির সম্মুখীন করছে।”

রহমান আরও বলেন: “ঘরে ঘরে শিক্ষার কৌশল রপ্ত করার লক্ষ্যে শিশুদের সহায়তায় আমাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন এবং শিশুরা যাতে রেডিও এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানকে আরও বিকশিত করতে পারে সেদিকেো ভুমিকা রাখা প্রয়োজন। আমরা ভীত যে শিবিরগুলোতে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার হ্রাস এবং সীমিত শিশু সুরক্ষা পরিষেবা তাদের জোরপূর্বক বিবাহ, শিশুশ্রম এবং শারীরিক ও যৌন সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।”

২০১৮ সাল থেকে, এডুকো কক্সবাজারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করে আসছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা মেয়েরা শিবিরগুলোতে সুরক্ষা পরিসেবা পেতে পারে। করোনাভাইরাস যখন বাংলাদেশে আঘাত হানে তখন রোহিঙ্গা এবং হোস্ট কমিউনিটিকে করোন ভাইরাস থেকে রক্ষায় সহায়তা করার জন্য এডুকো এবং চাইল্ডফান্ড কোরিয়া তৎক্ষণাৎ কক্সবাজারে কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেস্পন্স মিশন শুরু করে। এখনও অবধি, এডুকো এবং চাইল্ডফান্ড কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগে, ২,৫০০ পরিবারের ১৫,০০০ শিশুকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ( মাস্ক, সাবান, ডিটারজেন্ট এবং স্যানিটাইজার) এবং ৫০০ পরিবারকে নিঃশর্ত নগদ সহায়তা (৫,৫০০ টাকা) প্রদান করেছে, উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কক্সবাজারের সিভিল সার্জন স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ২০০টি মেডিকেল-গ্রেডের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) বিতরণ করেছে। হোম এডুকেশন এবং ছোট গ্রুপ ওরিয়েন্টেশন মিটিংয়ের মাধ্যমে এডুকো প্রায় ১২,০০০ শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ এবং শিশু সুরক্ষা বার্তার উপর নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করেছে।
সারা বাংলাদেশ জুড়ে, এডুকো, খাদ্য সামগ্রী (যেমন, চাল এবং ডাল), স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী এবং প্রতিরক্ষামূলক উপকরণ বিতরণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নগদ সহায়তা প্রদান এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তথ্য প্রচার করে কমপক্ষে ১০০,০০০ শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল হামিদ বলেছেন: “বাংলাদেশে, দৈনিক মজুরি উপার্জন করে এমন প্রায় ৯০% লোক অনানুষ্ঠানিক চাকরির বাজারে নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিদিন আমরা দেখছি যে অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে যা শিশুদের অনাহার থাকার ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। করোনাভাইরাস সংকট শুরু হওয়ায় দেশে শিশু, মহিলা এবং মেয়েদের উপর সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করছে। তবে আমরা যদি একত্র হয়ে আশা ও সাহসের সাথে একে অপরকে সহায়তা করি তবে আমরা এই প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রম করে উঠতে সক্ষম হব।’

সর্বশেষ আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২০, ০০:৪৭
ডেস্ক রিপোর্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন