লন্ডন হামলার পর ঘটনাস্থলে হিজাব পরা এক তরুনীর ছবি নিয়ে তোলপাড়

একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবিটি এবং ব্রিটেনের একজন এমপি টোবিয়াস এলউড ছুরিকাঘাতে আহত পুলিশ অফিসারকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন সেই ছবি পাশাপাশি পোস্ট করে মন্তব্য করেছেন, “মুসলিম এবং খৃষ্টানদের মধ্যে মূল পার্থক্য।”

একটি মাত্র ছবি দেখে একজন মানুষকে বিচার করা কতটা যুক্তিযুক্ত? লন্ডনে পার্লামেন্ট ভবনে সন্ত্রাসী হামলার পর হিজাব পরা এক মুসলিম তরুণীর ছবিকে যেভাবে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, এরপর সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

ছবিটি তুলেছিলেন ফ্রী ল্যান্স ফটোগ্রাফার জেমি লরিম্যান। হামলাকারি খালিদ মাসুদ ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর দিয়ে পথচারীদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়ে যাদের আহত করেছেন, সেরকম একজন ফুটপাথে পড়ে আছেন। আহত মানুষটিকে ঘিরে ধরে তার সেবা করছেন অন্য পথচারীরা।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন হিজাব পরা এক মুসলিম তরুণী। টেলিফোনে কথা বলছেন তিনি। তাঁর মুখের অভিব্যক্তি দিয়ে কি এই তরুণীকে বিচার করা ঠিক হবে?

গত কযেকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবিটিকে ব্যবহার করে তীব্র ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হয়েছে।

একটি টুইটার একাউন্ট থেকে ছবিটি পোষ্ট করে বলা হয়েছে, “দেখুন, হিজাব পরা মেয়েটি ছাড়া আর সবাই কিভাবে সাহায্য করছে। পশ্চিমা জীবন ধারার সঙ্গে শরিয়া সংস্কৃতি যায় না।”

আরেকজন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবিটি এবং ব্রিটেনের একজন এমপি টোবিয়াস এলউড ছুরিকাঘাতে আহত পুলিশ অফিসারকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন সেই ছবি পাশাপাশি পোস্ট করেছেন। সঙ্গে মন্তব্য, “মুসলিম এবং খৃষ্টানদের মধ্যে মূল পার্থক্য।”

কিন্তু আসলেই কি তাই? ছবির এই তরুণীটি সত্যি সত্যি তাঁর চারপাশে যা ঘটছিল সে সম্পর্কে একেবারেই ভাবলেশহীন?

ছবিটি যিনি তুলেছেন, তাঁর কথাই প্রথম শোনা যাক। এই ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিরাট শোরগোল শুরু হয়, তখন তিনিই সবার আগে মেয়েটির সমর্থনে এগিয়ে আসেন।

জেমি লরিম্যান লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আর সবার মতো এই তরুণীও ছিল লন্ডন হামলার পর খুবই বিচলিত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। একই সময়ে তার ক্লিক করা আরও কিছু ছবিতে সেটা বেশ স্পষ্ট।

“আমার মনে হয়েছে ঘটনার আঘাতে মেয়েটি খুবই বিচলিত এবং কিভাবে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে আসা যায় সেটাই ভাবছিল সে। সেসময় পুলিশও আমাদেরকে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলছিল বার বার।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় যাকে নিয়ে এত কান্ড, সেই তরুণী এরপর মুখ খুলেছেন। মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণার বিরুদ্ধে কাজ করে এমন একটি সংগঠন ‘টেল মামা’র মাধ্যমে তিনি একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

এই তরুণী বলেছেন, একটি ছবিকে ব্যবহার করে যেভাবে তাঁর সম্পর্কে নানা মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে তিনি খুবই আঘাত পেয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ঐ হামলার পর তিনি নিজেও ছিলেন বিচলিত। তিনি অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেছেন তখন। জানার চেষ্টা করেছেন তিনি কিভাবে অন্যদের সাহায্য করতে পারেন। এরপর তাঁর পরিবারকে ফোন করে কথা বলেছেন। এমনকি একজন মহিলাকে ওয়াটারলু স্টেশনে যেতে সাহায্য করেছেন।

তিনি বলেছেন, “যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার এই ছবি নিয়ে আজে বাজে মন্তব্য করেছেন, তারা আসলে আমার পোশাকটাই শুধু দেখেছেন। তারা ঘৃণা আর বিদেশীভীতির ওপর নির্ভর করে তাদের উপসংহার টেনেছেন।”

ছবির ফটোগ্রাফার জেমি লরিম্যান যেভাবে তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন, সেজন্যেও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই তরুণী।

ফটোগ্রাফার জেমি লরিম্যান বলেছেন, যারা এসব কথা বলেছেন, তারা তো সেখানেই ছিলেন না। সুতরাং কিভাবে তারা ধরে নিলেন যে এই তরুণী চারপাশের সবাইকে উপেক্ষা করে ফোনে কথা বলছেন? তাদের কোন ধারণাই নেই তখন তাঁর মনের ভেতর কি চলছিল।

টুইটারে অবশ্য শত শত মানুষ এই তরুণীর পক্ষ সমর্থন করে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য যারা করেছিলেন, তাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

অনেকে এমন ছবিও পোস্ট করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে অন্য মানুষরাও আপাত দৃষ্টিতে চারপাশের সবকিছু উপেক্ষা করে হেঁটে যাচ্ছেন!

ডায়ানা ডোনা নামে একজন মন্তব্য করেছেন, “না, আমার মনে হচ্ছে না মেয়েটি ভ্রুক্ষেপহীন। আমার মনে হচ্ছে মেয়েটি সাহায্য চেয়ে ফোন করছে বা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।”

সর্বশেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭, ২১:৪০
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন