প্রায় ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি শিশু বিশ্বাস করে যে লকডাউন শেষ হওয়ার পরে তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠবে। আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংস্থা ‘এডুকো’ দ্বারা পরিচালিত এক নতুন বৈশ্বিক সমীক্ষায় এ তথ্য জানা গেছে।
২০২০ সালের ৭ থেকে ২৩ মে অনলাইন এবং ফোন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এ সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশের ৫০০ এর অধিক শিশু, যাদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই ছিল মেয়ে।
এ গবেষণাটি আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের ২০টি দেশে পরিচালিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি শিশু ও যুবক এ গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শিশুরা তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। ২০ শতাংশ শিশু বলেছে যে তাদের পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের কাজে ফিরে যেতে না পারায় তারা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল হামিদ বলেন, ‘শিশুরা তাদের চারপাশে কী ঘটছে এবং পরিবারের উপর এই পরিস্থিতির প্রভাব কী সে সম্পর্কে সচেতন। যদিও এই মহামারির মূখ্য ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী হিসাবে শিশুদের বিবেচনা করা হয় না, তথাপি অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা জানি যে এই জাতীয় অর্থনৈতিক সংকট তাদের আবেগ এবং মানসিক সুস্থতার উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ সমীক্ষাটি আবারও নিশ্চিত করেছে যে, শিশুরা তাদের চারপাশে কী ঘটছে তা সম্পর্কে সজাগ এবং কীভাবে এই মহামারিটি তাদের এবং তাদের পরিবারকে প্রভাবিত করছে তা বাস্তবিক অর্থেই বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।
সবচেয়ে বেশি কোনো বিষয়ের কথা মনে করে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তারা অগ্রাধিকার দেয় বন্ধুদের সাথে দেখা করা (২২.৮৮ শতাংশ) এবং স্কুলে ফিরে যাওয়াকে (২১.৮ শতাংশ)। তবে তারা (৪২ শতাংশ) এটাও বুঝতে পারে যে, লকডাউন এর পরে তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
২০২০ সালে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী নূপুর আক্তার জানায়, ‘আমি আমার জীবনের নতুন পর্বে পা রাখার অপেক্ষায় আছি, তবে এখন সবকিছুই থমকে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে যখন আমি কলেজে যাওয়া শুরু করব তখন সবকিছু কেমন হবে তা নিয়ে আমি বেশ উদ্বিগ্ন। ক্লাসে অংশ নেওয়া, বন্ধুদের সাথে দেখা করা, একসঙ্গে (গ্রুপ) স্টাডি করা আর পূর্বের মতো হবে না বরং এগুলো হয়তো আমার এবং আমার পরিবারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হবে।’
শিশু সুরক্ষা টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস’র কর্মসূচি বিশেষজ্ঞ এহসানুল হক জানান, ‘এই সমস্ত ফলাফলের মাধ্যমে শিশুদের জীবনে বন্ধুত্ব এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে গুরুত্ব রয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। কারণ স্কুল কেবল এমন জায়গা নয় যেখানে শিশুরা শুধুই লেখাপড়া করতে যায় বরং এটি একটি সম্পর্ক, বৈচিত্র্য এবং ব্যক্তিগত বিকাশেরও জায়গা যার মাধ্যমে তারা সামগ্রিকভাবে তাদের উন্নয়নের সুযোগ পায়।’
অপরদিকে, প্রায় ২২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছে যে তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে পেরে আনন্দিত। ১৭ শতাংশ শিশুর মতে এমন পরিস্থিতিতে তারা বাড়িতে থাকতে পেরে বেশি নিরাপদ বোধ করে। এই পরিস্থিতিতে তারা অন্য যে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয় তা হল বাড়িতে বেশি সময় থাকা বা পড়াশুনার জন্য পরিবারের সহায়তা পাওয়া।
বিশ্বব্যাপী ১৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছে, তাদের মতে লকডাউনের পরে তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, সেই সাথে ২৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দিহান। তাদের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, বিশ্বব্যাপী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২২ শতাংশ বলেছে যে তারা বা তাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হতে পারে। ১৯ শতাংশ এর মতে, যে বিষয় নিয়ে তারা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত তা হল, তাদের পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্করা কাজ করতে বাইরে যেতে পারছেনা এবং ১৭ শতাংশ এরও বেশি আতঙ্কিত যে তাদের নিত্যপ্রয়োজন মেটানোর মত পর্যাপ্ত অর্থ হয়তো তাদের নাও থাকতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য