জীবনের প্রথম পহেলা বৈশাখ

অন্তরা সেন পিংকি
অন্তরা সেন পিংকি

অন্তরা সেন পিংকি:
হাতে আলতা লাগানো! খাবো কিভাবে? আশেপাশে মা কেও দেখতে পেলাম না। সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কি আর করা! অগত্যা আলতা রাঙা হাত দিয়েই খেতে হলো আমায়। বলছি আমার জীবনের প্রথম পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের কথা। তখন আমার বয়স ৫ বছর। উদিচী শিল্পগোষ্ঠীতে নাচ শিখতাম। সকাল সকাল পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শেষে যখন সবার সাথে ইলিশ পান্তা খেতে বসেছি তখন এমনই এক দুর্গতির সম্মুখিন হতে হয় আমাকে। যদিও এখন সেই ঘটনা মনে পরলে ভীষণ হাসি পায়। আবার ভালও লাগে।

ছোটবেলার পহেলা বৈশাখ উৎযাপন আর এখনকার পহেলা বৈশাখ উৎযাপনে এসেছে অনেক ভিন্নতা। ১৫ বছর আগের সেই প্রথম পহেলা বৈশাখ উৎযাপনে যে আনন্দ পেতাম সেই আনন্দটা এখন আর তেমন হয়না। তখনকার থেকে হয়তো জাঁকজমক বেশি হয় এখন। কিন্তু বর্তমান যান্ত্রিকতায় সেই আনন্দে এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। আগে মা বাবার হাত ধরে যেতাম পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানে। আর এখন যাওয়া হয় ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে। নেইল পলিশ নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে হাতে পায়ে আর আলতা পরা হয়না। আগে মেলা ঘুরে, হাতে উল্কি একে যে মজা পেতাম, সেই মজা এখন আমরা ফোনে সেল্ফি তোলার মধ্যে খুজে পাই। আগে সবাই মিলে একসাথে বসে ইলিশ পান্তা খেতাম,আর এখন কোনো বড় রেস্তোরায় গিয়ে ফ্রাইড রাইস,চিলি চিকেন খাই আর ফেসবুকে স্টেটাস দেই “সেই চিল হচ্ছে পহেলা বৈশাখে!”

হুম, এভাবেই কাটে আমাদের এখনকার পহেলা বৈশাখ। প্রিয় মানুষের সাথে রমনার বটমূলে বসে ছায়ানট এর গান শোনার থেকে ফেসবুকের স্টেটাসে কয়টা লাইক কমেন্ট শেয়ার হলো সেটা দেখতেই এখন বেশি ভাল লাগে!

আসলে প্রযুক্তিগত কারনে আমরা সত্যিই অনেক বদলে গেছি। যান্ত্রিকতার ছোঁয়া লেগে গেছে আমাদের মনের পরতে পরতে। আর সেই প্রভাব ফুটে ওঠে আমাদের জনজীবনের প্রতিটা উৎসবে। কিন্তু আমি চাইনা আমার পহেলা বৈশাখ এভাবে কাটুক। আমি চাই ১৫বছর আগের সেই পহেলা বৈশাখ। যেখানে ইলিশ পান্তা খাবার সময় আমার আলতা রাঙা হাতের ছোঁয়ায় ভাতের রঙ লাল হয়ে যাবে! তাই দেখে আমার বন্ধুরা হেসে বলবে “এমা! তুই লাল ভাত খাচ্ছিস?!! “

সর্বশেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ১১:০৪
ডেস্ক রিপোর্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন