শিশুর ফুসফুসের ‘কার্যকারিতা কমাচ্ছে’ ঢাকার বায়ুদূষণ

ঢাকার অনেক জায়গায় ঘন ধুলো-বালি দেখা যায়।AFP: Munir uz Zaman
ঢাকার অনেক জায়গায় ঘন ধুলো-বালি দেখা যায়।

পরিপাটি পোশাক পরিধান করে ধুলো-বালি মুক্ত হয়ে কোন গন্তব্যে পৌঁছানো ঢাকাবাসীর কাছে এক স্বপ্নের মতো।

শহরের অধিকাংশ জায়গায় বাসা থেকে বের হলেই রাস্তার ধুলোয় ‘গোসল’ করার মতো অবস্থা তৈরি হয়। যানবাহনের ধোঁয়া আর ধুলো-বালিতে একাকার এ শহরের জীবন।

পরিবেশবাদী সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের ইকবাল হাবিব জানাচ্ছেন বায়ু দূষণের এ পরিস্থিতি অনেক শিশুর ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। যাদের বেশিরভাগের বয়স ১৪ বছরের মধ্যে।

মি: হাবিব জানালেন, বছর খানেক আগে তারা ঢাকা শহরের ছয়টি স্কুলে শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতার উপর এক গবেষণা চালিয়েছিলেন। তাতে যে ফলাফল উঠে এসেছে সেটি অনেকটা আঁতকে উঠার মতো।

যেসব স্কুলগুলোতে এ গবেষণা চালানো হয়েছে, সেখানে প্রায় ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস পূর্ণ মাত্রায় কাজ করছে না। ফুসফুসের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ করছে।

মি: হাবিব বলছেন, বায়ু দূষণের কারণেই এ পরিস্থিতি হয়েছে। এদের বেশিরভাগের বয়স নয় থেকে ১৪ বছরের মধ্যে বলে জানালেন তিনি।

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি গবেষণা বলেছে পৃথিবীর যেসব শহরের বায়ু সবচেয়ে দূষিত তার মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয় অবস্থানে।

এমন অবস্থায় পূর্ণ বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা রয়েছে বেশি ঝুঁকিতে। ঢাকা শহরে বায়ু দূষণ জনিত রোগের মাত্রা শিশুদের মাঝে বেড়েই চলেছে। যেমনটা বলছিলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক রুহুল আমিন।

মি: আমিন বলেন, ” সাম্প্রতিক সময়ে শিশু হাঁপানি রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। পরিবেশ দূষণের কারণে শিশুদের মাঝে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে।”

বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ফুসফুস বেশি আক্রান্ত হয় বলে অধ্যাপক আমিন উল্লেখ করেন। কারণ দূষণের ধাক্কা সামলানোর জন্য শিশুদের ফুসফুস পরিপক্ব থাকে না।

সুস্থ জীবনের জন্য বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম কণার সর্বনিম্ন পরিমাণ যেটি নির্ধারণ করা আছে, ঢাকার বাতাসে সেটি তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

দূষণের কারণে জীবন দূর্বিসহ উঠলেও অনেকটা যেন হাল ছেড়ে দিয়েছেন নগরবাসী। কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে - এমন আশাও করছেন না অনেকে।

ঢাকার একজন বাসিন্দা সেজান আহমেদ বলেন, “একটা বাস নরমাল গতিতে গেলেও এতো পরিমাণ ধুলা ওড়ে যে মনে হয় মরুভূমিতে এসে পড়েছি।”

ঢাকার দূষণের চিত্র বিশ্বের অন্য বড় শহরগুলোর চেয়ে আলাদা। যানবাহনের ধোঁয়া এজন্য বড় বিষয় হলেও নির্মাণকাজ এবং রাস্তা কাটার কারণে প্রচুর ধুলো-বালি হয়।

এছাড়া শহরের চারপাশে ইট ভাটার কারণেও পরিবেশের দূষণ বাড়ছে। পরিবেশ আন্দোলনের ইকবাল হাবিব বলছেন নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বায়ু দূষণ হয়ে উঠে আকাশচুম্বী।

ঢাকা শহরের বায়ু দূষণ দিনের পর দিন যে খারাপের দিকে যাচ্ছে, সেকথা সবার জানা। কিন্তু এ পরিস্থিতির শীঘ্র কোন উন্নতি হবে এমন আশা করতে পারছেন না নগরের বাসিন্দারা।

সর্বশেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭, ০৩:৪৪
বিবিসি বাংলা

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন