তুরস্কের কি সত্যিই পশ্চিমের বিকল্প আছে?

সম্প্রতি তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। গত কয়েক দশকে দেশ দু’টির মধ্যে কখনো এত বেশি তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করেনি। মার্কিন ধর্মযাজক অ্যান্ড্রু ব্রানসনকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দায়ে দণ্ডিত করাসহ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে বিবাদ চলছে তুরস্কের। অবস্থা যখন এই তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রকে সাবধান করে বলেছেন, প্রয়োজনে তার দেশ নতুন মিত্র খুঁজবে।
চলমান এ সংকট শুরুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রকে একের পর এক হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, তুরস্ক ইরান থেকে রাশিয়া, চীন কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্য থেকে নতুন মিত্র খুঁজে বের করবে। একইসঙ্গে তিনি তুরস্ককে ব্রিকস ব্লকে যুক্ত করার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে এরকম হুমকি দেয়ার মধ্যেই ১৩ই আগস্ট তুরস্ক সফর করে গেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। আগামী ৭ই সেপ্টেম্বর ইস্তাম্বুলে রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও তুরস্কের নেতারা বৈঠকে বসবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সের্গেই ল্যাভরভের তুরস্ক সফরে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীই নিজেদের মধ্যে পারসপরিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছেন। বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির অবস্থার দিকে তাকালে এটি খুব বেশি আশ্চর্যজনক মনে হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও তুরস্কের এখন প্রায় একইরকম স্বার্থ রয়েছে। ইউক্রেন সংকটের জেরে রাশিয়ার প্রধান রাজনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক বর্তমানে তলানিতে অবস্থান করছে। একইসঙ্গে, ২০১৪ সালের পর রাশিয়ার উপরে আরোপ করা অবরোধের কারণে দেশটির মুদ্রা রুবলের মান প্রায় অর্ধেক কমে গেছে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে রাশিয়ার বাজেটে অর্থ ঘাটতি ছিল লক্ষণীয়।
একই অবস্থা এখন তুরস্কের সঙ্গেও ঘটছে। রাশিয়ার পরিণতির দিকে আস্তে আস্তে ঠেলে দেয়া হচ্ছে দেশটিকে। কিন্তু তুরস্ক তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত। পশ্চিমের মিত্রদের সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হয়েই চলেছে। পশ্চিমের সঙ্গে চলমান সংকটের কারণে তুরস্কের অর্থনীতি ক্রমাগত অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। যার প্রভাব পরেছে দেশটির মুদ্রা লিরার মানেও। সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে লিরার মানের রেকর্ড পতন তুরস্কের সামনে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের আভাস দিচ্ছে। তাই একই শত্রু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাশিয়া ও তুরস্ক এখন নিজেদের একই কাতারে বিবেচনা করছে। এটিই হয়তো দেশ দুটির মধ্যকার দীর্ঘকালের বৈরী সম্পর্ক ভুলে পরস্পরের মধ্যে মিত্রতা স্থাপনের কারণ হতে চলেছে।

সর্বশেষ আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:৫০
অনলাইন ডেস্ক

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন