শোক দিবস উপলক্ষ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ভিন্ন আয়োজন

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আগামী ১৫ আগষ্ট এই মহান মানুষটির ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। বঙ্গবন্ধু সবসমই স্বপ্ন দেখেছেন একটি বৈষম্যহীন সুন্দর রাষ্ট্রের, যেখানে সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে বর্তমান সমাজে একটু পিছিয়েই আছে হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষগুলো।

লিঙ্গ বৈচিত্র জনগোষ্ঠীর মানুষদের আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে রি-থিংক বিডি কাজ করছে রাজধানীর হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়ন এবং সদাচারণ প্রশিক্ষণের। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে হিজড়া সম্প্রদায়ের শিল্পীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোমবার (১৩ আগষ্ট) বিকেলে রাজধানীর গ্রীনরোডের বিন্দুধারীতে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ ৬ আসনের সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিথিংক বিডির পরিচালক লুলু আল মারজান।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার প্রাণের পরে চলে গেলো কে’ গানের সাথে সমবেত নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় আয়োজন। এসময় নৃত্য পরিবেশন করেন হিজড়া জনগোষ্ঠীর শিল্পী শিশির, জান্নাত, শাবন্তী, সুমি,মাহি, ঐশ্বর্য। এরপর ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন লারা ও শিশীর। পরে ‘নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গানটির সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পীরা। সবশেষে কবিগুরুর আরেকটি গান ‘ভেঙেছে দুয়ার, এসেছে জ্যোর্তিময়’ গানটির সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় রি-থিংক আয়োজিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, শোকের মাসে সাধারণত আমি কোন অনুষ্ঠানে হাততালি দেয়না। কিন্তু এ আয়োজনে তা না দিয়ে পারলাম না। রিথিংকের এ উদ্যোগ সত্যিই অনন্য।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যখন স্লোগান দিতাম তখন আমরা বলতাম, আমি কে তুমি কে বাঙালি বাঙালি। হিজড়া বা নারী পুরুষ বলে কিছু নেই। সকল মানুষ রাষ্ট্রের সমান অধিকারী। বর্তমান সরকার হিজড়াদের ভোটাধিকার দিয়েছে, স্মার্টকার্ড দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যিলয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রীও পাচ্ছেন। সরকার হিজড়াদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের সুযোগ সুবিধা নিয়ে এখনই উন্নয়ন করার সময়। সে উদ্যোগে শামিল হওয়ার জন্য রিথিংককে ধন্যবাদ।

স্বাগত বক্তব্যে সাংসদ ইস্রাফিল আলম বলেন, সমাজের একটি ছোট্ট অংশ হিজড়া জনগোষ্ঠী। সবার মতো তাদেরও রয়েছে সকল অধিকার। তারা অনেকেই সমাজের অবস্থাপন্ন পরিবারের সদস্য। কিন্তু শুধু হিজড়া হবার কারণেই তাদের সমাজে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখা হয়। অথচ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান প্রণোয়ন করে গেছেন, সে আঙ্গিকেই তাদের উন্নয়নের জন্য বর্তমানে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। রিথিংক’ও এখন সরকারের সহযোদ্ধা। এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। সে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে রি-থিংকের উদ্যোগ অভাবনীয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রি-থিংকের পরিচালক লুলু-আল-মারজান বলেন, বৃহৎ সমাজের চাপে পড়ে হিজড়া সম্প্রদায় তাদের গুরুর দ্বারস্থ হন একটা নিশ্চিত ও সুন্দর জীবনের আশায়। কিন্তু সেখানেও কখনো তাদের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যায় এবং নীপিড়নের শিকার হয়। আবার সেই ধারাবাহিকতাতেই একেকজন নিজেই গুরু হয়ে উঠেন। এই যে তাদের ধারাবাহিক জীবনের সংস্কৃতি, সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসাই এ ধরনের আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

সর্বশেষ আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০১৮, ০০:৫২
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন