স্টামফোর্ড থেকে বিদায় নিল ব্যতিক্রমী বিবিএ ৫৪ ব্যাচ

বরাবরের মতই ব্যতিক্রম বিবিএ ৫৪ ব্যাচ। চারবছর শেষের বিদায়ী আয়োজনের নাম দিয়েছে তারা “বিদায় অনুষ্টান”।

শুধু নামে না, কাজেও বিবিএ ৫৪ তম ব্যাচ ছিলো পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবধরণের সহশিক্ষা কার্যক্রমে, পড়াশোনায় ছিলো এগিয়ে।

দিনের শুরুতে ক্যাম্পাস জুড়ে ১২০জন শিক্ষার্থীর একটি বড় র্যালী ক্যাস্পাস প্রদক্ষিন করে অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে শেষ হয়, তখন পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের জুনিয়রেরা র্যালীতে যোগ দেয় এবং ৫৪ বিদায়ে যুক্ত হয়।

এরপর মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ নিয়ে একটি নাটক দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। এরপর বেজে উঠে জাতীয় সংগীত। এরপর মনিরুল ইসলাম ও মনিকার প্রাণবন্ত উপস্খাপনায় একে একে মঞ্চ আলোকিত করেন এবং শুভেচ্ছা জানান বিভাগের শিক্ষক একাউন্টিং শাখার প্রধান ইতি লায়লা কাজি,মো:নাজমুল হক, ফারিয়া কবির,এলিনা মাহবুবা শহীদ, খাদিজা রহমান,নাজনীন আলম, পাপড়ি সঞ্চিতা রয়, মাহজাবিন ফেরদৌস, আবিদা সৈয়দা মল্লিকা, সামিনা হক সহ বিভাগের প্রায় সকল শিক্ষক।

এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। উপস্থাপনায় ছিলো নিত্যনতুন ঢংয়ে অপসরী আর মনির। এসময় প্রথমেই বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তরার নাচ, হাসানের নেতৃত্বে বেনজির আবরার, আসিফ নেওয়াজ, আলাউদ্দিন রুমেল, আতিক শাহরিয়ার এর নাচ, গানের নাম টিকাটুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে….

এরমাঝেই এসে উপস্থিত হন আয়োজনের প্রধান অতিথি, বিজনেস এডমিনিষ্ট্রেশন বিভাগের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস কো-অর্ডিনেটর, এসোসিয়েট প্রফেসর নাঈম জালাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন,” আমার ক্যাম্পাসের সবচেয়ে ক্লিন ব্যাচ বিবিএ ৫৪, তোমরা প্রত্যেকে স্টামফোর্ডের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর। নিজেদের প্রতি খেয়াল রেখো।”

এরপর একে একে মঞ্চে আসে ইংরেজি ৫৪ ব্যাচের বিদায়ী শিক্ষার্থী জিহাদ আমিনের মাইম, বিবিএ ৫৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী, জাতীয় ও। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নাচ করা কাজি রায়হানের শৈল্পিক নাচ। মূল যে আকর্ষনটি ছিলো লাঞ্চ ব্রেক পর তা “গানের দুপুর”। এখানেও ছিলো ব্যাতিক্রম, একসাথে আটজন শিল্পী আর উপস্থাপক বসেন মঞ্চে, পুরো যেন টিভি লাইভ!!

এই অংশের উপস্থাপনা করেন ব্যাচের শিক্ষার্থী ও দেশের জনপ্রিয় ফিচার লেখক বেনজির আবরার, শিল্পী হিসেবে যারা ছিলেন তারা হলেন - মনিরুল ইসলাম, নাফিস আহমেদ, শিরিন সুমা, ইভা, অংকিতা, আতিক, হাসিব রাকিব, ওয়ালিউর রহমান ইভান। তারা সেই মেয়েটি, কফি হাউজ, তোরে পুতুলের মত করে সাজিয়ে এরকম বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গানের সাথে পারফর্ম করে ব্যান্ডের তালে তালে।

পুরোটা সময় বিভাগের শিক্ষক ফারিয়া কবির, নাজনীন আলম উপভোগ করেন শিক্ষার্থীদের এমন নান্দনিক, সুশৃংখল পরিবেশনা। এরপর ভবিষৎতে চাকুরী জীবনে দুর্ণীতি না করতে নেয়া হয় শপথ, তাও দুর্দান্ত একটি নাটকের মাধ্যমে। যেটির নির্দেশনা দেন ৫৪ জি সেকশনের সিআর মনিরুল ইসলাম মনির।

হয়ে যায় বাঙ্গালী ধাঁচে ব্যাতিক্রমী রেম্প শো।যেটির নির্দেশনায় ছিলেন উপস্থাপিকা অপসরী, সেখানে অজয়, আদিবা, লাবীবা, আসিফ -শিরিন, নাফিস, আতিক, মনির, রুমেল ছিলেন পারফর্মার।

বাকি থাকে আরো অনেক কিছুই, নাচ নিয়ে আসে বিদায়ী শিক্ষার্থী অংকিতা। ছয় বন্ধু নাচ- গানের নাম ও বন্ধু লাল গোলাপী! থাকে অজয়-ইভা-অন্তরার নাচ, আর ইভার একক নাচ!

পুরো আয়োজন জুড়ে সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসজুড়ে ছিলো ভিড়, অডিটোরিয়ামে ছিলোনা তিল ধারণের জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিলের শিক্ষার্থী তানভীর রেজা তার ফেসবুকে লিখেন, “নক্ষত্রদের হারাচ্ছে স্টামফোর্ড”। একইরকম অনুভূতি সন্ধ্যার পর ফেসবুকে দেখা যায় সিলভী, ইংরেজির আফসারা, সিভিলের সাকিব, তুহিন, দীপনদের ফেসবুক পোষ্টে।

বারবার বলা হচ্ছিলো এদের মাধ্যমে অনেক শুভ কিছুর শুরু দেখেছে স্টামফোর্ড, তার কিছুটা সারসংক্ষেপ পাওয়া গিয়েছিলো স্বাগত বক্তব্যে বেনজিরের কথায়- “বিবিএ অনুষদের প্রথম ব্যাচ এটি যাদের তিনজন একসাথে স্টামফোর্ড ফ্রেশার্স বিতর্কে ফাইনালে উঠেছিলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ক্লাব স্টামফোর্ড ডিবেট ফোরামের দুজন সহ-সভাপতি, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারী এই ব্যাচের, দেশজুড়ে আলোচিত সংগঠন “বন্ধুনীড়” প্রতিষ্টা করেছে বিবিএ ৫৪ এর ১৫জন শিক্ষার্থী, বিবিএর সবচেয়ে ফলাফল ভালো করা ব্যাচ বিবিএ ৫৪, এরা প্রতিষ্টা করেছে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক মাদকবিরোধী ফোরাম।এদের হাতে নেমেছে বিভাগের দুর্দান্ত কিছু আয়োজন- “স্ম্যাশেস এইচআর অফ স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি”, “সিন্ড্রেলা স্লিপারস বিজনেস কেইস কম্পিটিশন ২০১৭ ” এর মত আয়োজন করে বিবিএর প্রথম কোনো ব্যাচ এরাই।এরাই প্রথম ব্যাচ যারা সাতটি সেকশন একসাথে পিকনিক, বর্ষপূর্তি, মিলাদ সবকিছু পালন করে, এদের পরিবেশনায় মুখরিত থাকে স্টামফোর্ড সিদ্ধেশ্বরীর মূল আয়োজন “পহেলা বৈশাখ”। আরো রয়েছে সফলতার নানা গল্প, সেগুলো থাকে পর্দার অন্তরালে….

সন্ধ্যা নামতে রং উৎসবে আর সাদা টিশার্টে শুভ বার্তা লেখায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে বিদায়ী ৫৪ ব্যাচ, দিনে করা আনন্দ নেমে আসে কান্নায় এক হয়ে। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে যে কান্না তারা করছিলো, মনে হচ্ছিলো এখানেই জন্ম নিচ্ছে নতুন এক ইতিহাস। ভাগ্যটা ভালো, চাঁদটা বড় ছিলো কাল, আলো কম দিয়ে…

দেখেনি কেউ কান্না, দেখবেনা কেউ….
ভালো থাকুক বিজনেস এডমিনিষ্ট্রেশন বিভাগ আর ৫৪ তম ব্যাচ।

সর্বশেষ আপডেট: ৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:৫৯
ডেস্ক রিপোর্ট

পাঠকের মন্তব্য

সর্বশেষ আপডেট


বিনোদন